প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্লিপ্ত ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত ইইউ কাউন্সিলের বৈঠকের আগে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ইসরাইল মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা একটি নৈতিক দুর্বলতা এবং দ্বিমুখী নীতির প্রতিচ্ছবি।
প্রধানমন্ত্রী সানচেজ বলেন, ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক ১৮টি নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ আরোপ করেছে। অথচ, ইসরাইল যখন স্পষ্টভাবে মানবাধিকারের চুক্তির ধারা ২ লঙ্ঘন করছে, তখন তাদের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্থগিত করতেও ব্যর্থ হয়েছে ইইউ। তিনি এই দ্বিচারিতা নিয়ে কঠোর প্রশ্ন তোলেন এবং বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে তিনি ইসরাইলের সঙ্গে ওই চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য ইইউকে চাপ দেবেন।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে স্পেন ও আয়ারল্যান্ড যৌথভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানায়, যাতে ইসরাইলের সঙ্গে তাদের চুক্তি পর্যালোচনা করা হয়। তাদের এই কূটনৈতিক উদ্যোগের প্রেক্ষিতে ইইউ প্রথমে নিরুৎসাহী থাকলেও মে মাসে নেদারল্যান্ডসের মধ্যস্থতায় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় আসে এবং চুক্তি পর্যালোচনার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তবে ইইউ’র নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। সোমবার এক বৈঠকে ব্লকের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা চুক্তি পর্যালোচনার বিষয়ে আলোচনা করেন। সেই বৈঠকের পর ইইউ’র পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস সাংবাদিকদের জানান, আপাতত ইসরাইলের সঙ্গে চুক্তি স্থগিত করার সম্ভাবনা নেই। তিনি বলেন, ইইউ’র প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে স্থলভাগে বাস্তব পরিস্থিতির পরিবর্তন আনা। যদি পরিস্থিতি উন্নত না হয়, তাহলে জুলাই মাসে পুনরায় আলোচনায় বসা হতে পারে।
তবে এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার তিনি জোর দিয়ে বলেন, এখন আর অপেক্ষা করার সময় নেই। স্পষ্টতই ইসরাইল তাদের চুক্তিভুক্ত মানবাধিকার সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আর দেরি করা উচিত হবে না। তাঁর মতে, ইউরোপ যদি সত্যিই মানবাধিকার রক্ষা এবং ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে চায়, তবে এক্ষুণি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
পেদ্রো সানচেজের এই অবস্থান ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে ইউরোপের রাজনৈতিক নেতৃত্বে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরেই এখন স্পষ্ট মতপার্থক্য দেখা যাচ্ছে—একপাশে রয়েছে স্পেন ও আয়ারল্যান্ডের মতো দেশ যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার, অন্যপাশে রয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স বা নেদারল্যান্ডসের মতো কিছু সদস্য রাষ্ট্র যারা এখনো সংযমী অবস্থানে থাকতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করছে।
সামগ্রিকভাবে, স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বে ইউরোপীয় নীতিনির্ধারকদের দ্বৈত নীতির প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং আগামী দিনের ইউরোপীয় রাজনীতিতে এ নিয়ে প্রবল বিতর্কের ইঙ্গিত দিয়েছে।