প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ঢাকা শহরের এক ব্যস্ত সকাল। হাজারো শিক্ষার্থী তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা দিতে ছুটছে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের দিকে। ঠিক সেই ভিড়েই হারিয়ে গেল এক তরুণী। রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে এইচএসসি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছেন মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলি নামের একজন শিক্ষার্থী। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সংশ্লিষ্ট মহলে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ, আতঙ্ক এবং এক প্রশ্ন—কোথায় গেল মাহিরা?
নিখোঁজ মাহিরা মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের ছাত্রী। রবিবার (২৯ জুন) সকালে, প্রায় সকাল ৮টার দিকে, নিজ বাসা—ভাটারা থানাধীন জগন্নাথপুর এলাকার কেবি বিল্ডিং, যমুনা হাজী সমীর উদ্দিন রোড থেকে একাই পরীক্ষাকেন্দ্রের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। তার পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল মিরপুর কলেজ। কিন্তু পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছানোর খবর নেই, এমনকি তিনি পরীক্ষায় অংশও নেননি—এ তথ্য পরিবারকে জানানো হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। এরপর থেকেই শুরু হয় উৎকণ্ঠার জল্পনা-কল্পনা।
মাহিরার বড় বোন মারিয়া বিনতে মারুফ বলেন, “আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো দেরি করে বেরিয়েছে বা কোথাও আটকে পড়েছে। কিন্তু কলেজ থেকে নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, এমনকি পরিচিত সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছি, কিন্তু কোথাও ওর সন্ধান পাইনি।”
পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার পরপরই ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর: ১৩৩৬/২৫) দায়ের করা হয়। মাহিরার গায়ের রঙ ফর্সা, উচ্চতা আনুমানিক ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি এবং নিখোঁজের সময় তার পরনে ছিল সাদা কলেজ ড্রেস।
নিখোঁজের এই ঘটনায় শুধু পরিবার নয়, তাদের আত্মীয় ও সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মাহিরার মামা মোহাম্মদ জহিরুল হুদা জালাল তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি হৃদয়বিদারক পোস্ট করে লিখেছেন, “আজ রবিবার সকাল ৮টায় আমার ভাগ্নি মাহিরা বিনতে মারুফ পিউলি ভাটারা এলাকা থেকে একাই পরীক্ষার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিন্তু তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। পরীক্ষাকেন্দ্রেও সে অনুপস্থিত ছিল। দয়া করে সবাই ওকে খুঁজে পেতে সাহায্য করুন।”
পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজের ঘটনায় সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। কেউ মাহিরার খোঁজ পেলে অনুগ্রহ করে ভাটারা থানা বা সরাসরি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। যোগাযোগ নম্বর: ০১৭১১২৩৭৬৯৪।
এদিকে ভাটারা থানার দায়িত্বরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) সৈয়দ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, “আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে কোনো সন্দেহজনক তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে প্রতিটি সম্ভাবনার দিক থেকেই তদন্ত এগিয়ে চলছে। সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করা হচ্ছে। নিখোঁজ হওয়ার স্থান ও সময়ের আশেপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যেই মুহূর্তে আমরা কোনো কৃতকার্য তথ্য পাই, সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করব।”
মাহিরার হঠাৎ নিখোঁজ হওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে আবারও প্রশ্ন উঠেছে কিশোরীদের নিরাপত্তা, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত নিরাপত্তা নিয়ে। এ ধরনের ঘটনায় শুধুমাত্র এক পরিবারের নয়, গোটা সমাজের নিরাপত্তা উদ্বেগের জায়গা তৈরি হয়।
একজন শিক্ষার্থী যখন পরীক্ষার দিন সকালে বের হয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়, তা শুধু একটি ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, বরং একটি বড় সামাজিক এবং নৈতিক প্রশ্ন হয়ে ওঠে। মাহিরা বিনতে মারুফের দ্রুত, সুস্থ ও নিরাপদে ফিরে আসা কামনা করছে গোটা দেশ। তবে এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো, আমাদের নগরজীবনের জটিলতা ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ কতটা গভীরে পৌঁছেছে। এখন অপেক্ষা—মাহিরার সন্ধান পাওয়ার জন্য এবং একইসঙ্গে আরও নিরাপদ নগর বাস্তবতার স্বপ্ন দেখার।