প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক ভয়াবহ ও রহস্যজনক চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে। অজ্ঞান পার্টি বলে সন্দেহভাজন একটি চক্র রাতে দুইটি বাড়িতে চেতনানাশক স্প্রে করে সদস্যদের অচেতন করে দেয় এবং চুরি করে নিয়ে যায় বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ। পুরো ঘটনা ঘটেছে মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে শ্যামনগর পৌরসভার বাদঘাটা গ্রামে।
চুরি হওয়া বাড়িগুলো হলো দেবীরঞ্জন মন্ডল ও তার ভাই চিত্তরঞ্জন মন্ডলের। এক বাড়ি থেকে সাড়ে ৯ ভরি সোনা ও দেড় লাখ টাকা চুরি যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও, অন্য বাড়ির সদস্যরা গুরুতর অসুস্থ থাকায় সেখান থেকে কী পরিমাণ মূল্যবান সামগ্রী চুরি হয়েছে, তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় সূত্র ও পরিবার জানায়, এই চেতনানাশক চক্র এতটাই নিখুঁতভাবে কাজ করেছে যে, পরিবারের সদস্যরা কিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। পরদিন সকালে আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় অচেতন অবস্থায় ৬ জনকে উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে ভর্তি ব্যক্তিরা হলেন, দেবীরঞ্জন মন্ডল (৬৫), তার স্ত্রী শিখা রানী মন্ডল (৫০), বোন সুমিতা রানী মন্ডল (৪৫), মেয়ে শিউলী মন্ডল (৩০), চিত্তরঞ্জন মন্ডল (৬৭) এবং তার স্ত্রী নীলিমা রানী মন্ডল (৫৫)। তাদের মধ্যে চিত্তরঞ্জন ও তার স্ত্রীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
দেবীরঞ্জনের জামাই পলাশ মজুমদার জানান, চোরেরা যে সুনিপুণভাবে পরিকল্পনা করেই কাজ করেছে, তা পরিষ্কার বোঝা যায়। তিনি বলেন, “আমাদের বাসা থেকে ২ ভরির দুটি সোনার দুল, ২ ভরির একটি সোনার পাটি হার, ৪ ভরির তিনটি সোনার চেইন, দেড় ভরির চারটি সোনার আংটি এবং নগদ এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। কেউ ঘর থেকে বের হওয়ারও সুযোগ পায়নি, সবাই তখন অচেতন।”
চিত্তরঞ্জনের বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, কারণ ওই পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসাধীন ও কথা বলার অবস্থায় নেই।
এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাদঘাটা গ্রামের অনেক বাসিন্দা রাতে পাহারা দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি উঠেছে। অতীতেও sporadic অজ্ঞান পার্টির হামলার খবর শোনা গেলেও, একসাথে দুইটি বাড়িতে এত বড় ধরনের ঘটনা এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির মোল্যা বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ চলছে এবং তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই তদন্তের অগ্রগতি জানানো হবে এবং দোষীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃস্থাপন ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনকে আটক করা যায়নি।
এই ঘটনার পর, এলাকাবাসীর মধ্যে আত্মরক্ষার প্রস্তুতি ও সচেতনতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চেতনানাশক স্প্রে ব্যবহার করে অপরাধের প্রবণতা আগের তুলনায় বেড়েছে, যা শুধু আর্থিক ক্ষতির নয়, প্রাণহানির আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলছে।
শ্যামনগরের এই ঘটনা শুধু একটি এলাকারই নিরাপত্তা সংকটকে তুলে ধরে না, বরং সমগ্র সমাজে অপরাধ প্রবণতার দিকেও ইঙ্গিত করে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া না হলে, এমন ঘটনা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।