প্রকাশ: ১লা জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থী এক আফগান তরুণের বয়স নিয়ে দীর্ঘ বিতর্ক এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার পর উচ্চ আদালতের রায়ে উঠে এসেছে এক নতুন দৃষ্টান্ত। মুখে দাড়ি, গালে বয়সের রেখা ও মাথায় ধূসর চুল—এসব দেখে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে চিহ্নিত করলেও, যুক্তরাজ্যের অভিবাসন আদালতের একজন বিচারক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যই কারও প্রকৃত বয়স নির্ধারণের নির্ভরযোগ্য উপায় নয়।
আফগানিস্তানের জালালাবাদের নিকটবর্তী এক গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণ ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে পৌঁছান। যুক্তরাজ্যের অভিবাসন অফিসে তিনি জানান, তিনি তার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও পরিবারের সহায়তার আশায় দেশটি পাড়ি দিয়েছেন এবং পড়াশোনা শেষে স্বদেশে ফিরে যেতে চান। তবে ইস্ট সাসেক্স কাউন্টি কাউন্সিলের সমাজকর্মীরা তার শারীরিক চেহারার ভিত্তিতে দাবি করেন—তার বয়স ১৮ বছর এবং তিনি কিশোর নন।
মূল্যায়নকারী দল জানায়, তার গালে দাড়ি, মাথায় সাদা চুল এবং “যৌবনের উজ্জ্বলতার অভাব” তাকে বয়সে বেশি দেখিয়েছে। এমনকি তার মুখের গঠন এবং দেহের বৃদ্ধি অন্যান্য কিশোরদের সঙ্গে অমিল রয়েছে বলেও তারা দাবি করেন। তিনি যে নিজের জন্মসনদ বা তাজকিরা হারিয়ে ফেলেছেন—সে সংক্রান্ত বক্তব্যেও ছিল অসামঞ্জস্য।
তবে এসব তথাকথিত প্রমাণ আদালতে গৃহীত হয়নি। বিচারক ম্যাথিউ হফম্যান বলেন, শারীরিক চেহারা দিয়ে বয়স নির্ধারণ করা “কুখ্যাতভাবে অবিশ্বাস্য” এবং বিশেষ করে একজন দুর্বল, উদ্বাস্তুর ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি অনির্ভরযোগ্য। তিনি বলেন, “একজন কিশোরের কিছু ধূসর চুল থাকা অস্বাভাবিক হলেও অসম্ভব নয়, বিশেষ করে যদি সে যুদ্ধ ও দারিদ্র্যের ভয়াবহ চাপের মধ্যে বড় হয়।”
বিচারক আরও যুক্তি দেন যে, ভিটামিনের ঘাটতি, মানসিক চাপ এবং পারিবারিক জেনেটিক্সের প্রভাবও একটি কিশোরের চুল ধূসর হওয়ার কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, সে যখন দাবি করেছে যে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকালে তার বয়স ১৫, তখন সে সত্য বলেছে।”
রায়ে বিচারক জানান, ছেলেটির মা তাকে বলেছিলেন—যখন তার বয়স ১৫ হবে, তখন রমজানে রোজা রাখতে হবে। এই ভিত্তিতে বিচারক তার জন্মতারিখ ১৫ অক্টোবর ২০০৬ হিসাবে নির্ধারণ করেন। অর্থাৎ যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর সময় ছেলেটির বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।
এই রায়ে আরও একবার প্রশ্ন উঠে এসেছে—যে কোন ভৌত বৈশিষ্ট্য দেখেই কি আশ্রয়প্রার্থীদের বয়স বা পরিচয় নির্ধারণ করা উচিত? আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছে, এমন সিদ্ধান্ত প্রায়ই রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সুবিধা অনুযায়ী নেওয়া হয়, যার ফলে প্রকৃত শিশু আশ্রয়প্রার্থীরা প্রকৃত সহায়তা থেকে বঞ্চিত হন।
বিচারকের রায় কেবল এই তরুণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করেনি, বরং পুরো অভিবাসন ব্যবস্থার মূল্যায়ন ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটি প্রয়োজনীয় বার্তা দিয়েছে। ভবিষ্যতে, এমন অনেক আশ্রয়প্রার্থী, যারা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ভুলভাবে পরিণত হিসাবে চিহ্নিত হন, তাদের মামলার জন্য এই রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে।
যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতির এই সিদ্ধান্ত কি শুধু একজন কিশোরের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করল, নাকি এটি আরও বৃহৎ নৈতিক ও নীতিগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে—সেটাই এখন দেখার বিষয়।