প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
গাজা উপত্যকার অবরুদ্ধ ও যুদ্ধবিধ্বস্ত জনগণের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একাধিকবার বিতর্কিত ও কড়া ভূমিকায় আলোচিত এই প্রেসিডেন্ট এবার গাজার মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি কামনায় মানবিক অবস্থান গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি নিজেই। ট্রাম্প বলেন, “আমি চাই গাজার মানুষ নিরাপদে থাকুক। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওরা সত্যিই নরকের ভেতর দিয়ে গেছে।”
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ওয়াশিংটনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা আনাদোলু অ্যাজেন্সি শুক্রবার (৪ জুলাই) বিষয়টি নিশ্চিত করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি কি এখনো মনে করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের গাজা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প সরাসরি তার আগের অবস্থান স্পষ্ট না করলেও বলেন, “গাজার মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তিই আমার প্রধান কাম্য। তারা অসহায়ভাবে যুদ্ধের নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে। সত্যি বলতে, তারা যেন একেবারে নরকের ভেতর দিয়েই গেছে।”
ট্রাম্পের এই মানবিক উক্তি অনেককেই বিস্মিত করেছে, কারণ গত ফেব্রুয়ারিতে তিনিই প্রথমবার গাজা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, যা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। মানবাধিকার সংস্থাগুলো থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল পর্যন্ত ট্রাম্পের এ উদ্যোগকে একটি ‘নব-উপনিবেশবাদী’ ধারণা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে সে সময়ের পরও তিনি একাধিকবার এই প্রস্তাব বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপন করেছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতেও ট্রাম্প বলেন, “আমি আশা করি, আগামী সপ্তাহের যেকোনো সময় গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।” একইসঙ্গে তিনি ঘোষণা দেন, আগামী সপ্তাহেই ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে গাজা ও ইরান সংকট নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসবেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই সাম্প্রতিক বিবৃতি হয়তো আন্তর্জাতিক চাপ, চলমান মানবিক সংকট ও ২০২৬ সালের নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ‘মানবিক নেতৃত্বের মুখোশ’ ধারণের চেষ্টা হতে পারে। তবে অনেকেই বলছেন, অন্তত একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে গাজার মানুষের জন্য এমন সহানুভূতির প্রকাশ বিশ্ববাসীর কাছে নতুন বার্তা বহন করে।
এরপরও বাস্তবতা ভিন্ন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির ক্রমাগত আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইলি সেনাবাহিনী গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন অব্যাহত রেখেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই হামলা গত ২১ মাসে এক বিভীষিকাময় মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ৫৭ হাজার ১০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বড় অংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও এক লাখের বেশি মানুষ।
এই প্রেক্ষাপটে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্য বিশ্ব গণমাধ্যমে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যদিও সমালোচকরা বলছেন, একাধিকবার গাজা নিয়ে নীতিগতভাবে দ্ব্যর্থপূর্ণ অবস্থান নেওয়া ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পিছনে রাজনৈতিক কৌশলও লুকিয়ে থাকতে পারে।
তবুও অবরুদ্ধ গাজায় রোজকার ধ্বংসস্তূপ আর মৃত্যুর মুখোমুখি মানুষদের জন্য যদি এই বক্তব্য বাস্তব কোনো সহায়তায় রূপ নেয়, তবে সেটিই হয়তো হয়ে উঠবে এই সময়ের সবচেয়ে প্রত্যাশিত মানবিক পদক্ষেপ।