সর্বশেষ :
রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন গবেষণাভিত্তিক একাডেমিক পরিবেশ গঠনে যবিপ্রবিতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার এক দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া: থাই রাজনীতিতে বিরল এক অধ্যায়ের সূচনায় দিনশেষেই ইতি নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে ব্যস্ততা, একদিনে ভিড়েছে ৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকারিভাবে পালনের ঘোষণা: সারাদেশে সাধারণ ছুটি, প্রজ্ঞাপন জারি

একটি নতুন বাংলাদেশের খোঁজে: মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও রাষ্ট্র সংস্কারের সংগ্রাম

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫
  • ২২ বার

প্রকাশ: ১৩ই জুন ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের এক বছরের মাথায়, অন্তর্বর্তীকালীন নেতা এবং নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস দেশের প্রশাসনিক কাঠামো, রাজনীতি ও অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের দুঃসাহসী উদ্যোগে নেমেছেন। ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহে দীর্ঘ সময়ের শাসক শেখ হাসিনার পতনের পর এই আন্দোলনের ব্যতিক্রমী নেতৃত্বের কেন্দ্রে রয়েছেন তিনি। ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনের লক্ষ্যে তিনি যে স্বপ্ন দেখছেন, তা শুধুমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য নয়, বরং সম্পূর্ণ একটি প্রশাসনিক সংস্কার, যা দুর্নীতিমুক্ত, নাগরিকবান্ধব এবং সামাজিক ন্যায়ের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে থাকবে।

ইউনূস দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ এখনও সরকারকে একটি শত্রু হিসেবে দেখে। সরকারি লেনদেনের প্রতিটি ধাপে ঘুষ এবং অনিয়মের বাস্তবতা জনগণকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। পাসপোর্ট সংগ্রহ থেকে শুরু করে ব্যবসার লাইসেন্স নিতে গেলেও ‘অদৃশ্য ফি’র চাপ যেন অবধারিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, “মানুষ সরকারকে তাদের স্থায়ী শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে, এবং প্রতিনিয়ত এই শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে বাঁচতে হয়। এটি একটি ভয়ঙ্কর ও শক্তিশালী শত্রু, তাই তারা দূরে থাকতে চায়।”

গত বছরের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছাত্রদের ক্ষোভ থেকে, যা সময়ের সাথে সাথে বৃহৎ সামাজিক ও রাজনৈতিক অসন্তোষে রূপ নেয়। জীবনযাত্রার ব্যয়, কর্মসংস্থানের অভাব এবং তরুণদের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা এসব প্রতিবাদের মূল চালিকা শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনার সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ এবং ব্যর্থ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ চরমে পৌঁছে যায়।

মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষায়, “আমাদের শুরুটা ছিল একটি ভাঙা অর্থনীতি, একেবারে ছিন্নমূল সমাজ। প্রশাসন কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছিল। এমনকি আমরা জানতাম না, আগামী মাসের বিদ্যুৎ বিল মেটাতে পারব কিনা।” তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো একের পর এক ‘ঋণ’ দিয়ে গেছে রাজনৈতিক প্রভাবশালী গোষ্ঠীকে, জেনেও যে তা আর ফেরত আসবে না।

এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে যেসব সংস্কার কমিশন তৈরি করা হয়েছে, সেগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক চুক্তির দিকে এগিয়ে যেতে চান ইউনূস। আগামী মাসে জুলাইয়ে বিক্ষোভের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে, যার মধ্য দিয়ে নির্বাচনপূর্ব সংস্কারগুলো কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউনূস মনে করেন, এই মুহূর্তে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—সংলাপে আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা অতীতের তুলনায় এক বিরল রাজনৈতিক ঐক্যের ইঙ্গিত। যদিও বিএনপি নির্বাচনের তারিখ দ্রুত চূড়ান্তকরণ এবং প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ সীমিত করার প্রস্তাব নিয়ে অটল রয়েছে, তারপরও এই আলোচনা এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে।

একইসাথে, মুহাম্মদ ইউনূস সামাজিক ব্যবসা এবং ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েও কাজ করছেন। তার মতে, ঐতিহ্যগত ব্যাংকিং ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষকে উপেক্ষা করে, আর এনজিওদের দ্বারা পরিচালিত বর্তমান ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে একটি নিবেদিতপ্রাণ ‘ক্ষুদ্রঋণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তর করতে হবে। “আমরা চাই মানুষ যেন উদ্যোক্তা হতে পারে, ব্যাংকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে অপমান না সয়েই,” বলেন তিনি।

অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও তিনি দৃঢ় বিশ্বাস করেন, ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর এবং একে বদনাম দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া অনৈতিক। “এই ব্যবস্থায় কোনও ভুল নেই। বরং এটিকে আরও বিস্তৃত ও সুশৃঙ্খলভাবে গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে,” বলেন তিনি।

রাজনৈতিকভাবে চাপে থাকা সত্ত্বেও ইউনূস জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি এপ্রিলের জাতীয় নির্বাচনের পর সরকারে থাকতে চান না। তবে তার আগ পর্যন্ত তিনি চাইছেন একটি সুশাসনমূলক রূপরেখা রেখে যেতে, যাতে ভবিষ্যতের সরকার একটি সুস্থ প্রশাসনিক কাঠামো পায়। “আগে আওয়ামী লীগ আমাকে আক্রমণ করত, এখন সবাই করে। এটি এই পদে থাকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। কিন্তু আমি জানি, [নির্বাচনের পর] আমরা অদৃশ্য হয়ে যাব। ততদিন পর্যন্ত আমাদের কাজ করে যেতে হবে,”—এইভাবেই শেষ করেছেন তার কথাবার্তা।

এক বছর আগেও যিনি ছিলেন একটি বিতর্কিত ও চেপে ধরা কণ্ঠ, আজ তিনিই দেশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে থেকে জনগণের জন্য একটি বিকল্প ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন—যেখানে রাষ্ট্র হবে অংশগ্রহণমূলক, প্রশাসন হবে জনসেবামূলক এবং রাজনীতি হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ধারক।

একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরির এই পথে, পথটা যে কণ্টকাকীর্ণ—তা ইউনূস ভালো করেই জানেন। তবু তিনি এগিয়ে চলেছেন, কারণ তার বিশ্বাস, পরিবর্তন অসম্ভব নয়—যদি সদিচ্ছা, সাহস এবং ঐক্য থাকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া