সর্বশেষ :
রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন গবেষণাভিত্তিক একাডেমিক পরিবেশ গঠনে যবিপ্রবিতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার এক দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া: থাই রাজনীতিতে বিরল এক অধ্যায়ের সূচনায় দিনশেষেই ইতি নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে ব্যস্ততা, একদিনে ভিড়েছে ৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকারিভাবে পালনের ঘোষণা: সারাদেশে সাধারণ ছুটি, প্রজ্ঞাপন জারি

রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০২৫
  • ১৩ বার

প্রকাশ: ৩রা জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন |

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীতে অবস্থিত মহাখালীর ‘জাকারিয়া হোটেল – রেস্টুরেন্ট এন্ড বার’ এ গত ৩০ জুন এবং ১ জুলাই দুটি ঘটনায় রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও ক্ষমতার অপব্যবহারের এক উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। মূলত ঘটনাগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে জনপ্রিয় আলজাজিরা সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে বিস্তারিত তুলে ধরেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম, সংবাদপত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের সমন্বয়ে একটি বাংলাদেশ অনলাইনের পক্ষ থেকে এই অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ঘটনার সূত্রপাত হয় ৩০ জুন ২০২৫, রাত অনুমানিক ৮টা ৫ মিনিটে। বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক পরিচয়ধারী মনির খান তখন মহাখালীর জাকারিয়া হোটেল – রেস্টুরেন্ট এন্ড বারে প্রবেশ করেন এবং একটি ভিআইপি রুম ভাড়া নিতে চান। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, সে সময় সব ভিআইপি কেবিনে অতিথিরা অবস্থান করছেন, ফলে আর কোনো রুম খালি নেই। মনির খান রুম না পেয়ে কিছুটা বিরক্ত হলেও হোটেলের বার অংশে বসে খাবার ও মদ্যপান করেন।

খাবার শেষে নিজেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিলের উপর ডিসকাউন্ট দাবি করেন তিনি। হোটেল কর্তৃপক্ষ তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে বিলের উপর ছাড় দেয় এবং তিনি তা পরিশোধ করে হোটেল ত্যাগ করেন। কিন্তু, তখনই জানা যায় মনির খান ক্ষোভ প্রকাশ করে হোটেল স্টাফদের হুমকি দিয়ে বলেন, “তোমরা আমাকে চিনে রাখো, তোমাদের দেখছি।”

ঘটনার এখানেই শেষ হয়নি। এর পরদিন, ১ জুলাই ২০২৫, রাত আনুমানিক ৮টা ৩০ মিনিটে, হোটেলটিতে ফের এক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, একজন ব্যক্তি যিনি পরে পরিচিত হন লিটন চৌধুরী নাহিদ নামে, তিনি প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই একটি গ্লাস হাতে নিয়ে মেঝেতে ছুঁড়ে ভেঙে ফেলেন। এরপর হোটেলের বারের মধ্যে উচ্চ স্বরে বলেন, “মনির ভাই তোদের হোটেলে আসছিল, তোরা মনির ভাইকে অসম্মান করেছিস। আমরা মনির ভাইয়ের লোক। তোরা চিনে রাখবি।”

এই বক্তব্যের পরপরই একদল লোক হোটেল এবং বারের ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। উপস্থিত সিসিটিভি ও মোবাইল ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তারা বারের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে এবং কর্মচারীদের এলোপাতাড়িভাবে মারধর করে। একাধিক কর্মচারী আহত হন—কেউ হাতে, কেউ বুকে, কেউবা পিঠে ও পায়ে মারাত্মক আঘাত পান। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে হয় বলে জানা যায়।

হোটেল কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে আরও অভিযোগ করে জানায়, হামলাকারীরা স্পষ্টভাবে হুমকি দিয়ে যায়—এই ঘটনা যদি পুলিশের কাছে জানানো হয়, তাহলে তারা হোটেলের ব্যবসা বন্ধ করে দেবে এবং স্টাফদের আবারও মারধর করবে। এই অবস্থায় হোটেল কর্তৃপক্ষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যায় এবং তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের সহায়তা চায়নি বলেও ধারণা করা হয়।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করেন মনির খানের সঙ্গে। প্রশ্ন করা হলে মনির খান স্বীকার করেন, তিনি ৩০ জুন রাতে জাকারিয়া হোটেল এবং বারে গিয়েছিলেন এবং ভিআইপি রুম না পাওয়ায় হতাশ হন। তিনি জানান, স্টাফদের কিছু কথা বলেছেন এবং রাগান্বিত অবস্থায় সেখান থেকে বেরিয়ে যান। তবে ১ জুলাইয়ের হামলার ঘটনায় তিনি নিজে জড়িত নন বলে দাবি করেন। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, “আমি বিষয়টি শুনে অবাক হয়েছি। আমি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত নই এবং যারা এটা করেছে তাদের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি অনুতপ্ত যে, আমার কারণে এমন কিছু হয়ে থাকতে পারে।”

তবে স্থানীয় সূত্র ও পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, রাজনীতিক পরিচয় ও প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কর্মজীবীদের উপর যে ধরণের ভয়ভীতি ও নির্যাতনের সংস্কৃতি গড়ে উঠছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ ধরণের ঘটনা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও নিরপেক্ষ তদন্ত ছাড়া বন্ধ হবে না।

জাকারিয়া হোটেল ও রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা করেনি, তবে ঘটনার ভিডিও এবং প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে বলে জানা গেছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কতটা দ্রুত, নিরপেক্ষ ও নির্ভীকভাবে এই ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে পারে।

এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজন নীতি-নৈতিকতা ভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা, দলীয় পরিচয়কে পুঁজি করে সন্ত্রাস ও অনাচারের সংস্কৃতি রুখে দেওয়ার দৃঢ় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ এবং সর্বোপরি একটি মানবিক ও নিরাপদ সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সবার দায়িত্বশীলতা।

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এবং প্রশাসনের প্রতি এখন সময়ের দাবি—সত্য উদঘাটন হোক, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক, এবং দেশ হোক ভয় ও প্রভাবের ঊর্ধ্বে এক সংবেদনশীল ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া