প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
২০২৫-২৬ অর্থবছরের সূচনাতেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম প্রধান সমুদ্রবন্দর মোংলা নতুন প্রত্যয়ের বার্তা দিয়েছে। একদিনেই বন্দরের জেটিতে একযোগে ভিড়েছে ৪টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ, যার মাধ্যমে যেমন অর্থনীতিতে এসেছে গতিশীলতা, তেমনি বন্দর ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা ও প্রস্তুতিরও প্রতিফলন ঘটেছে। গত অর্থবছরে সকল লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে পূরণ করে নতুন অর্থবছরে এমন দৃশ্যপট বন্দরের উন্নয়ন ধারাকে আরও জোরালো করেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১ জুলাই সকাল থেকেই বন্দরের বিভিন্ন জেটিতে থামতে শুরু করে বাণিজ্যিক জাহাজগুলো। ৫ নম্বর জেটিতে প্রথম নোঙর করে সিঙ্গাপুর পতাকাবাহী জাহাজ Kota Restu, যা একটি ‘গিয়ারলেস’ কন্টেইনারবাহী জাহাজ। এতে এসেছিল ২৯৯ টিইইউজ (TEUs) কনটেইনার, যা দেশের অভ্যন্তরীণ আমদানি-রপ্তানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
একই দিন, ৬ নম্বর জেটিতে ভিড়ে পানামা পতাকাবাহী ট্যাংকার M.T. HaiHong, যার মাধ্যমে আমদানি করা হয় চিটাগুড়। এর পাশাপাশি, ৭ নম্বর জেটিতে পৌঁছায় সিয়েরা লিওন পতাকাবাহী M.V. History Eduard, যার বহরে ছিল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মেশিনারিজ। একই সঙ্গে ৯ নম্বর জেটিতে নোঙর করে পানামা পতাকাবাহী জাহাজ M.V. D S Prosperity, যা এনেছে পাওয়ার গ্রীড কোম্পানির উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি।
এই চারটি জাহাজের আগমনকে কেন্দ্র করে বন্দর এলাকায় তৈরি হয় কার্যক্রমের ব্যস্ততা। সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, অপারেটর ও বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেন পণ্য খালাস ও নিরাপদ সংরক্ষণের জন্য। শুধু জেটি এলাকাই নয়, বন্দরের আশপাশের চ্যানেল ও গভীর সমুদ্রপথেও জাহাজের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে বন্দরের হাড়বাড়িয়া চ্যানেলে অবস্থান করছে ৭টি বিদেশি জাহাজ, বেসক্রিক এলাকায় রয়েছে ২টি, এলপিজি জেটিতে রয়েছে ১টি এবং পোর্ট লিমিট জুড়ে মোট ১৪টি বাণিজ্যিক জাহাজের অবস্থান নিশ্চিত করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এইসব জাহাজে বহন করা পণ্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে কয়লা, চাল, চিটাগুড়, সার, ক্লিংকার, পাথর, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, এলপিজি গ্যাসসহ শিল্প ও জ্বালানি খাতে ব্যবহৃত নানা উপকরণ। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং পাওয়ার গ্রীড কোম্পানির মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের যন্ত্রপাতি পৌঁছানোয় জাতীয় উন্নয়ন কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবেও এই আগমন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ডিজিটাল প্রযুক্তি সংযোজনের ফলে। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সম্প্রতি ক্রয় করা হয়েছে নতুন মোবাইল হারবার ক্রেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্ট এবং বর্ধিত ওয়ারহাউস সুবিধা। এসব উন্নয়নের ফলেই আজ মোংলা বন্দর বড় আকারের মালবাহী জাহাজও দক্ষতার সঙ্গে গ্রহণ ও পরিচালনা করতে পারছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের আশাবাদ, নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনেই জাহাজ আগমনের এই চিত্র আগামীদিনে আরও উজ্জ্বল হবে। দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনৈতিক বিকাশে মোংলা বন্দরের ভ‚মিকা প্রতিদিনই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা দেশজ উৎপাদন, রপ্তানি ও কর্মসংস্থানের ওপরও ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
একদিনে একাধিক বাণিজ্যিক জাহাজের নোঙর শুধু অর্থনৈতিক গতিশীলতারই পরিচায়ক নয়, এটি দেশের নৌবাণিজ্য ব্যবস্থার পরিপক্বতা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক অংশীদারদের আস্থার প্রতিফলনও বটে। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে মোংলা বন্দর শুধু দক্ষিণাঞ্চলের নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের বাণিজ্য প্রবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।