প্রকাশ: ২রা জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে স্থান করে নেওয়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থান নানা জেলা-উপজেলায় বয়ে এনেছিল গভীর শোক, রক্ত এবং প্রতিরোধের এক বিস্ফোরক সময়। সেই রক্তাক্ত অধ্যায়ের অন্যতম স্মৃতিচারণে নড়াইলের লোহাগড়ায় আয়োজিত হলো এক আবেগঘন আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
মঙ্গলবার, ১ জুলাই বিকেলে লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের আরোগ্য ও শান্তি কামনায় এই সভার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারীরা যেন ফিরে তাকালেন এক করুণ, কিন্তু গর্বিত অতীতের দিকে। বিশেষ করে লোহাগড়া, যেখানে স্বাধীন মতপ্রকাশের দাবিতে রাজপথে নামা নিরীহ মানুষ প্রাণ হারান, আহত হন অসংখ্য, সেই জায়গাটি যেন এদিন পরিণত হয়েছিল নীরব প্রতিবাদের এক প্রতীকী মিনারে।
আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন লোহাগড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মিলু শরীফ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মশিয়ার রহমান সান্টু, যিনি তাঁর বক্তব্যে শহীদদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করে বলেন, “ওইদিন রক্ত ঝরেছিল আমাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের দাবিতে—আজ আমরা তাঁদের স্মরণ করছি শুধু নয়, তাঁদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছি।”
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লোহাগড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আহাদুজ্জামান বাটু। তিনি তাঁর বক্তব্যে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিচারহীনতা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান এবং শহীদদের স্মরণ করে বলেন, “তাঁদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। এই শহীদেরাই আমাদের আগামী দিনের সংগ্রামের অনুপ্রেরণা।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতানুজ্জামান সেলিম শহীদ পরিবারগুলোর পাশে থাকার প্রত্যয় জানান এবং স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক ঐক্য আরও জোরদার করার আহ্বান জানান।
আলোচনায় আরও অংশ নেন পৌর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মোল্যা নজরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজিজার সরদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শাহ আলম সিকদার, ওহিদুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস. এ সাইফুল্লাহ মামুন, শেখ জহিরুল ইসলাম জহির, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর রহমান, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সোহেল রানা লাক্সমি, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কাজী ইকবাল হোসেন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক এস আলম শিপলু, উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আলম মুন্সি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জি. তাইবুল হাসান, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য সাজ্জাদ সিকদার, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব রিফাত খানসহ আরও অনেকে।
বক্তব্যগুলোর প্রতিটিতে উঠে আসে একটি অভিন্ন সুর—স্বাধীনতার সুবর্ণপ্রকাশ এবং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর পুনর্গঠনের জন্য শহীদদের আত্মাহুতি অমূল্য। বক্তারা সেই আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, তারা জনগণের অধিকার রক্ষায় পথ হারাবে না।
সভা শেষে এক বিশিষ্ট আলেমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হয় দোয়া মাহফিল, যেখানে উপস্থিত সবাই শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনায় অংশ নেন। আলোচনার শেষে পুরো প্রাঙ্গণ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের আবেগঘন নীরবতা—যেন লোহাগড়ার আকাশবাতাস জবাব চায়, তাদের শহীদের রক্তের ঋণ কে শোধ করবে।
এই আলোচনা সভা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না, বরং ছিল ইতিহাসকে স্মরণ, অঙ্গীকারকে নবায়ন এবং প্রতিরোধের আগুনকে জীবন্ত রাখার এক দৃপ্ত প্রয়াস। ‘একটি বাংলাদেশ অনলাইন’ তার পাঠকদের জানিয়ে রাখছে—এ দেশে গণতন্ত্রের জন্য ঝরানো রক্ত কোনো দিন বৃথা যাবে না।