প্রকাশ: ২৮শে জুন ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
দেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ে চলমান সংকটের মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মত দিয়েছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা বলেন, এই মুহূর্তে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সংকট, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন এবং এর ফলে সৃষ্ট আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতার প্রেক্ষাপটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধান। একইসঙ্গে তারা একটি দক্ষ, হয়রানিমুক্ত ও আধুনিক এনবিআর প্রতিষ্ঠায় কাঠামোগত সংস্কারের পক্ষে জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দেশের ১৩টি শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের সাবেক ও বর্তমান নেতারা একত্র হয়ে এই বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ, এলএফএমইএবির সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, মেট্রো চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান এবং আরও অনেকে।
নেতারা বলেন, এনবিআরের ভেতরে কর্মবিরতি ও কমপ্লিট শাটডাউনের ফলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সীমিত সময়ের কাজের সুযোগ থাকায় আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকদের পণ্য খালাস কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ‘লিড টাইম’ বেড়ে গিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানি আদেশ বাতিলের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তারা সরাসরি বলেন, এই পরিস্থিতিতে সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনায় বসতে হবে। একইসাথে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এনবিআর চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব বা চাপ ব্যবসায়ীদের বিবেচনায় সম্পূর্ণ অনুচিত এবং অপ্রয়োজনীয়। তারা মনে করেন, সাংগঠনিক সংস্কার এবং দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে সংকট নিরসনই এখন সময়ের দাবি।
এছাড়াও বক্তারা বলেন, পণ্যের খালাসে বিলম্বের কারণে ব্যবসার ব্যয় যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়ছে। বন্দরে কাঁচামাল পড়ে থাকার ফলে উৎপাদনে ধীরগতি দেখা দিচ্ছে, যা একদিকে যেমন শ্রমিকদের জীবিকা অনিশ্চয়তায় ফেলছে, অন্যদিকে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকেও হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান, ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমান এবং সিরামিক শিল্প সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মঈনুল ইসলামসহ একাধিক নেতৃবৃন্দ এনবিআরের চলমান অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সবশেষে তারা আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান, যাতে তারা দেশের অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে তাদের কলমবিরতি ও শাটডাউন কর্মসূচি শর্তহীনভাবে প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেন। সেই সঙ্গে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যেন অবিলম্বে এই সংকট নিরসনে কার্যকরী, আন্তরিক ও বিশ্বাসযোগ্য আলোচনার মাধ্যমে একটি সুদূরপ্রসারী সমাধান খুঁজে বের করা যায়।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে গৃহীত অবস্থান শুধু অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরে না, বরং দেশের রাজস্ব প্রশাসন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটায়। এখন সময় সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণের, যা এই অচলাবস্থা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে পারে।