প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড সৃষ্টির পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও এসেছে বড় সুখবর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২৯শে জুন পর্যন্ত দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অন্যতম সর্বোচ্চ। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২৯ জুন পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ বা মোট রিজার্ভের পরিমাণ ৩১,৩১৩ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার, যা ডলারে প্রকাশ করলে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশিত BPM6 বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টস ম্যানুয়াল ৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভের পরিমাণ হয় ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে নিট রিজার্ভ বা প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে। নিট রিজার্ভ হিসাব করা হয় মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় ও অন্যান্য অপরিশোধিত দায় বাদ দিয়ে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই রিজার্ভ প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক খাতের জন্য একটি সুস্থ ও স্বস্তিদায়ক বার্তা। বিগত কয়েক মাসে আমদানি ব্যয় হ্রাস, রপ্তানি আয় কিছুটা স্থিতিশীল থাকা এবং বিশেষ করে রেমিট্যান্সের রেকর্ড প্রবাহ এই রিজার্ভ বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে।
রিজার্ভের এই ইতিবাচক অগ্রগতির পেছনে রয়েছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান—বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স। চলতি অর্থবছরের ২৮ জুন পর্যন্ত দেশে এসেছে ৩০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স, যা দেশের ইতিহাসে কোনো একক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এটি বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রতি দেশের নির্ভরতার প্রতিচ্ছবি।
শুধু জুন মাসের (প্রথম ২৮ দিনে) হিসাবেই দেখা গেছে, দেশে এসেছে ২৫৩ কোটি ৯২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ এসেছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে, যেখানে প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ১৬১ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৫ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৩৬ কোটি ১২ লাখ ৩০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৩ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সক্রিয় হস্তক্ষেপ, হুন্ডি প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ, রেমিট্যান্স প্রণোদনার প্রভাব এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর সহজীকরণ এই রেকর্ড সৃষ্টির পেছনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে সমন্বিত নীতিমালা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে এই ইতিবাচক ধারা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে বলে তারা আশাবাদী।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক বিনিময় হারের চাপে অনেক উন্নয়নশীল দেশ যখন রিজার্ভ সংকটে ভুগছে, তখন বাংলাদেশের এই অবস্থান নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই ইতিবাচক ধারাকে টেকসই করতে হলে রপ্তানি খাতের বৈচিত্র্য আনা, আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং প্রবাসী আয় আরও বাড়ানোর দিকে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
সব মিলিয়ে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রিজার্ভ বৃদ্ধির এই চিত্র বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনা, বাজার স্থিতিশীল রাখা এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নির্ধারণে এই ইতিবাচক সূচকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।