সর্বশেষ :
রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন গবেষণাভিত্তিক একাডেমিক পরিবেশ গঠনে যবিপ্রবিতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার এক দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া: থাই রাজনীতিতে বিরল এক অধ্যায়ের সূচনায় দিনশেষেই ইতি নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে ব্যস্ততা, একদিনে ভিড়েছে ৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকারিভাবে পালনের ঘোষণা: সারাদেশে সাধারণ ছুটি, প্রজ্ঞাপন জারি

বিদেশভ্রমণে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন বহন: আসিফ মাহমুদ ইস্যু ও শাসনতান্ত্রিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রশাসন

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ১৫ বার

প্রকাশ: ৩০শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

সম্প্রতি এক আলোচিত ও বিতর্কিত ঘটনার সূত্র ধরে বাংলাদেশে অস্ত্রের লাইসেন্স, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। এই ঘটনাটি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে, যার উৎস ছিল জনপ্রিয় ইউটিউবার ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার পিনাকী ভট্টাচার্যের ফেইসবুক পেইজে দেয়া এক বিশ্লেষণধর্মী পোস্ট। ঘটনার মূলে রয়েছেন মন্ত্রী পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা, যার নাম এসেছে ‘আসিফ মাহমুদ’ হিসেবে।

ঘটনার মূল প্রতিপাদ্য হলো—আসিফ মাহমুদ বিদেশ সফরের সময় একটি গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন সহ বিমানবন্দরে উপস্থিত হন, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অভিবাসন প্রোটোকল অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে, এটি আন্তর্জাতিক প্রচলিত নজিরে একেবারেই ব্যতিক্রম নয়। পিনাকীর পোস্টে তুলে ধরা হয়—মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনেটর জেফ উইলসনও অনুরূপ পরিস্থিতিতে হংকংয়ে নিজেকে অস্ত্র বহনের দায়ে হাজির করেছিলেন এবং সতর্কতা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। সে তুলনায় আসিফের ঘটনায় বিষয়টি আগেই নিয়ন্ত্রণে আসায় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।

তবে এই পুরো ঘটনাটির সামাজিক ও প্রশাসনিক অভিঘাত আরও গভীর। পিনাকীর বক্তব্যে উঠে এসেছে—অস্ত্রের লাইসেন্স সংক্রান্ত যে সব আইন তথাকথিত অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা প্রচার করছেন, তার অনেকটাই ভিত্তিহীন এবং ভুল ব্যাখ্যামূলক। বাংলাদেশের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, মন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তিবর্গ আয়কর প্রদানের মাধ্যমে লাইসেন্স প্রাপ্তির নিয়মে বাধ্য নন। ফলে আসিফ মাহমুদের লাইসেন্স প্রাপ্তি কিংবা অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তার আর্থিক সামর্থ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করাও যথাযথ নয়। তার ব্যক্তিগত জীবনে সংসার, সন্তান কিংবা অতিরিক্ত ব্যয়ের খাত না থাকায় নিয়মমাফিক অস্ত্র কেনা ও তা বহনের যুক্তিকতা খাটে।

এই জায়গায় প্রশ্ন ওঠে—যদি আসিফ আইনত একটি বৈধ অস্ত্র রাখেন, তবে তার একটি ম্যাগাজিন বহনের ঘটনায় এতটা হইচই কেন? বিশেষত, যখন তা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির পর্যায়ে পৌঁছায়নি? আসলে প্রকৃত সংকট সেখানেই নয়—সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু হলো, এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ কীভাবে এবং কেন ফাঁস হলো।

এয়ারপোর্টের মত একটি উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা অঞ্চলের সিসিটিভি ফুটেজ যদি এভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা দিকগুলোর গোপনীয়তা নিয়েও গভীর আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রশ্ন ওঠে, এই ফাঁস কাণ্ড কি কেবল ‘ভুল করে’ না কি এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে?

পিনাকী ভট্টাচার্যের পোস্টের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিকটি হলো, যেখানে তিনি পুরো ঘটনাটিকে একটি গভীর রাজনৈতিক বৈরিতার প্রতিফলন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক ও নিরাপত্তা বাহিনী এখন একটি শত্রু মনোবৃত্তি নিয়ে বর্তমান সরকার—যেটিকে তিনি “প্রফেসর ইউনুসের সরকার” বলে উল্লেখ করেন—তার বিরুদ্ধে কাজ করছে। তাদের কাছে এই সরকার “শত্রু সরকার” হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এমন গোপনীয় তথ্যও ফাঁস করা হচ্ছে কোনোরকম রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা ছাড়াই।

এই বক্তব্য দেশের বর্তমান প্রশাসনিক কাঠামোর উপর একটি বিপজ্জনক প্রশ্নচিহ্ন টেনে দেয়। যদি প্রশাসনের অভ্যন্তরে থেকেই সরকারকে হোস্টাইল বা শত্রু হিসেবে দেখার মানসিকতা তৈরি হয়, তাহলে সেই সরকার কীভাবে জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে? কীভাবে ন্যায্য শাসন প্রতিষ্ঠা হবে? কীভাবে জনগণ একটি সুশাসনের সুফল পাবে?

এমন সময় যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে একটি সংবেদনশীল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, তখন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ এই বিভাজন, তথ্য ফাঁসের ঘটনা এবং আইনকে নিজস্ব সুবিধামতো ব্যাখ্যার প্রবণতা রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও জনআস্থা—উভয়ের জন্যই হুমকিস্বরূপ।

পিনাকীর স্ট্যাটাসটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত মত নয়, বরং এটি একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের দরজা খুলে দিয়েছে—বাংলাদেশ কি এখনও তার নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক কাঠামোতে নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বস্ততা ধরে রাখতে পারছে? যদি না পারে, তাহলে প্রতিপক্ষ নয়, ভেতরের এই দ্বন্দ্বই হয়তো একদিন বড় সংকট হয়ে দেখা দেবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া