সর্বশেষ :
রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন গবেষণাভিত্তিক একাডেমিক পরিবেশ গঠনে যবিপ্রবিতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার এক দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া: থাই রাজনীতিতে বিরল এক অধ্যায়ের সূচনায় দিনশেষেই ইতি নতুন অর্থবছরের শুরুতেই মোংলা বন্দরে ব্যস্ততা, একদিনে ভিড়েছে ৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে সরকারিভাবে পালনের ঘোষণা: সারাদেশে সাধারণ ছুটি, প্রজ্ঞাপন জারি

যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানের ইউরেনিয়াম অপসারণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি

একটি বাংলাদেশ অনলাইন
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৩ বার
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানের ইউরেনিয়াম অপসারণের প্রমাণ পাওয়া যায়নি

প্রকাশ: ২৭ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ইরান তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কোনো অংশ সরিয়ে নিয়েছে—এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্য তাঁর হাতে নেই। গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, তাঁর দেখা বা জানা মতে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো থেকে কোনো কিছুর স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এই মন্তব্য আসে এমন এক সময়ে, যখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও কয়েকজন পারমাণবিক বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন, ইরান হামলার আগে তাদের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কিছু অংশ গোপনে সরিয়ে ফেলেছে এবং তা হয়তো এমন কোনো স্থানে লুকানো হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল বা জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের অজানা।

গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক বিমান হামলা চালায়। এই অভিযানে ব্যবহৃত হয় ‘বাংকার-বাস্টার’ নামে পরিচিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বোমা, যার প্রতিটির ওজন ৩০ হাজার পাউন্ডের বেশি। মার্কিন সামরিক বাহিনীর মতে, এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ভেদ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে।

হামলার কয়েকদিন পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ বলেন, তিনি এমন কোনো গোয়েন্দা তথ্যের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেন না যা ইঙ্গিত দেয় যে ইরান হামলার আগে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো সরিয়ে নিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “আমি এমন কিছু দেখিনি বা শুনিনি যা বলছে, যেসব জিনিস যেখানে থাকার কথা ছিল, সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বা অন্য কোথাও পাঠানো হয়েছে।”

প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি হেগসেথের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, যদি কিছু সরিয়ে নেওয়া হতো, তবে তা করতে সময় লাগত। ট্রাম্প তাঁর নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনার বাইরে যে গাড়িগুলো দেখা গেছে, সেগুলো ছিল নির্মাণকর্মীদের, যারা টানেলের মুখ ঢাকার কাজ করছিল। তাঁর দাবি, সেখানে থেকে কিছুই সরানো হয়নি, যদিও তিনি নিজ বক্তব্যের পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

অন্যদিকে, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইনান্সিয়াল টাইমস ইউরোপীয় গোয়েন্দা মূল্যায়নের বরাতে জানিয়েছে, ইরানের ইউরেনিয়াম মজুতের একটি অংশ ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল এবং এই ইউরেনিয়াম কেবল ফোর্দোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তাই সামগ্রিক মজুত এখনো অক্ষত থাকতে পারে।

ম্যাক্সার টেকনোলজিসের স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, হামলার আগের দিনগুলোতে ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় অস্বাভাবিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। চিত্রে দেখা যায়, স্থাপনাটির একটি প্রবেশপথের বাইরে বহু যানবাহন সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যা সম্ভাব্য স্থানান্তর বা প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিতে পারে।

রয়টার্সের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, হামলার আগেই ৬০ শতাংশ মাত্রার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় একটি অংশ সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে এসব তথ্য মার্কিন প্রশাসন সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।

হেগসেথ দাবি করেন, কিছু সাংবাদিক ইচ্ছাকৃতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সফলতাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির একটি মূল্যায়ন রিপোর্ট ফাঁস হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এই হামলা হয়তো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কয়েক মাসের জন্য থামাতে সক্ষম হবে। তবে হেগসেথ এই মূল্যায়নকে “কম বিশ্বাসযোগ্য” হিসেবে অভিহিত করেন।

এর পাশাপাশি তিনি সিআইএর পরিচালক জন র‍্যাটক্লিফের মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ইরানকে তা পুনর্গঠনে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।

এই হামলার তথ্য নিয়ে সেনেটের ১০০ সদস্যকে একটি গোপন ব্রিফিং প্রদান করা হয়, যাতে উপস্থিত ছিলেন হেগসেথ, র‍্যাটক্লিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন। তবে জাতীয় গোয়েন্দা বিষয়ক পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ড এই ব্রিফিংয়ে অংশ নেননি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি তাঁর এক মন্তব্যে তুলসিকে সমালোচনা করে বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না—এই দাবিতে তিনি ভুল করেছেন, কারণ এই বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

এদিকে মার্কিন কংগ্রেসে এমন একটি প্রস্তাব উঠতে পারে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, ভবিষ্যতে ইরানে যেকোনো সামরিক পদক্ষেপের আগে কংগ্রেসের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করতে হবে। তবে আইন বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রস্তাব আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

অন্যদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি ভবিষ্যতে আবার হামলা চালায়, তবে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো ইরানের পাল্টা আঘাতের লক্ষ্য হবে। তাঁর এই মন্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, এই সংঘাত আরও তীব্র হতে পারে এবং তা গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে এবং বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কূটনৈতিক ও সামরিক নীতির দিকগুলো ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া