প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিযোগিতামূলক পারফরম্যান্সের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তবে এই পথচলায় কিছু কিছু ব্যক্তিগত কীর্তি যেন দলের সামগ্রিক চিত্রকে খানিকটা আলোকিত করে রাখে। ঠিক এমন এক মাহেন্দ্রক্ষণে কলম্বো টেস্টে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে উইকেটের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের কোনো বোলারের জন্য প্রথমবারের মতো অর্জন।
গল টেস্টে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে একরকম ব্যর্থতাই দেখেছে বাংলাদেশ দল। প্রথম টেস্টে আত্মবিশ্বাসী সূচনার পর টাইগারদের পরিকল্পনায় ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। কোচ ফিল সিমন্সও বলেছিলেন, কলম্বো টেস্টে জয় ছাড়া অন্য কিছু ভাবছেন না তারা। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। কলম্বো টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ব্যাট হাতে ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ শ্রীলঙ্কার হাতেই তুলে দেয় সফরকারীরা। দ্বিতীয় দিন পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে যখন লঙ্কান ব্যাটাররা দাপট দেখাতে শুরু করেন। এই নিরাশার মাঝে বাংলাদেশ শিবিরে একমাত্র আশার আলো হয়ে ওঠেন তাইজুল ইসলাম।
ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনের সূচনালগ্নে শ্রীলঙ্কার ওপেনার লাহিরু উদারাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। এটি ছিল তার ১০০তম উইকেট বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে, যা তাকে বাংলাদেশের হয়ে এই মাইলফলকে পৌঁছানো প্রথম বোলার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু তাই নয়, বৈশ্বিক বিবেচনায় এটি ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে কারো ১৬তম ১০০ উইকেটের মাইলফলক—যেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছেন বিশ্বসেরা সব বোলাররা।
অস্ট্রেলিয়ার অফ-স্পিনার নাথান লায়ন রয়েছেন এই তালিকার শীর্ষে, যিনি ৫২ ম্যাচে শিকার করেছেন ২১০ উইকেট। তাঁর পেছনেই অবস্থান করছেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, যার সংগ্রহ ৪৯ ম্যাচে ২০৮ উইকেট। এখন পর্যন্ত এই দুজনই একমাত্র বোলার, যাঁরা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ২০০ উইকেটের মাইলফলক অতিক্রম করেছেন।
তাইজুলের এই কীর্তি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ তিনি এখন পর্যন্ত চারটি চক্র মিলিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে খেলেছেন ২৫টি ম্যাচ। সেখানে তাঁর গড় বোলিং ফিগার ৩৫.০০ এবং ইকোনমি ২.৯৭। তাঁর সেরা বোলিং পারফরম্যান্স ছিল ১১৬ রানে ৭ উইকেট শিকার, যা তাঁর দক্ষতার পরিচায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে এটা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। বিশ্বমঞ্চে যেখানে বাংলাদেশ দল সবসময়ই লড়াই করে টিকে থাকার জন্য, সেখানে একজন বোলার এমন মাইলফলকে পৌঁছানো নিছক গর্বের বিষয়। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণ স্পিনারদের জন্য এটি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
তাইজুলের পর এই অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছেন আরও একজন বাংলাদেশি স্পিনার—মেহেদী হাসান মিরাজ। তিনি এখন পর্যন্ত ২৯টি ম্যাচের ৪৮ ইনিংসে নিয়েছেন ৮৭টি উইকেট। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে তিনিও শিগগিরই উইকেটের শতকের ক্লাবে নাম লেখাতে পারেন বলে আশা করা যায়।
তাইজুল ইসলামের এই অর্জন শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি তার নিরব অথচ দৃঢ় সংগ্রামের ফল। বছরের পর বছর বাংলাদেশের হয়ে নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে তিনি যেভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এমন এক সময়ে, যখন বাংলাদেশ দল দলগতভাবে ছন্দহীন, তখন একজন ব্যক্তির এমন অর্জন পুরো জাতিকে ক্রিকেটের প্রতি নতুন করে আশাবাদী করে তুলতে পারে।
তাইজুলের শততম উইকেট কেবল তার নয়, এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাপ্তিও বটে—একটি জাতির ক্রিকেট ইতিহাসে ছোট কিন্তু গভীর পদচিহ্ন।