সর্বশেষ :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং কাণ্ড: নবীন নির্যাতনে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গণরোষের মুখে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর: আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ঘটনা রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন গবেষণাভিত্তিক একাডেমিক পরিবেশ গঠনে যবিপ্রবিতে পরিবেশ উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনার এক দিনের প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া: থাই রাজনীতিতে বিরল এক অধ্যায়ের সূচনায় দিনশেষেই ইতি

গাজায় নতুন করে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ইসরায়েলি সেনা নিহত—বাড়ছে উত্তেজনা ও মানবিক সংকট

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫
  • ২ বার
গাজায় নতুন করে ভয়াবহ সংঘর্ষ, ইসরায়েলি সেনা নিহত—বাড়ছে উত্তেজনা ও মানবিক সংকট

প্রকাশ: ২৯শে জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় নতুন করে বড় ধরণের বিস্ফোরণ এবং হামলার ঘটনায় আবারও এক ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) নিশ্চিত করেছে, গাজার উত্তরে চলমান সামরিক অভিযানের সময় বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছেন সার্জেন্ট ইস্রায়েল নাটান রোজেনফেল্ড, যার বয়স মাত্র ২০ বছর। তিনি ৬০১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নের সদস্য ছিলেন এবং একই সঙ্গে আকাবাত হা-বারজেল (৪০১) ডিভিশনের অধীনেও দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ইসরায়েলের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ জানায়, জুন মাসে গাজায় নিহত হওয়া সেনাসদস্যদের মধ্যে রোজেনফেল্ড হচ্ছেন ২০তম। সাম্প্রতিক সময়ে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তৎপরতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাও। আইডিএফ-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে স্বল্পস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর গাজায় আবারও সংঘর্ষ শুরু হলে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন ৩০ জন সেনা সদস্য। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার মাধ্যমে যে যুদ্ধপর্ব শুরু হয়, সেই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ৮০০-এর বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন।

তবে গাজা সীমান্তের ভেতরে সংঘর্ষের চিত্র আরও ভয়াবহ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গতকাল রোববার (২৯ জুন) এক দিনের ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ জন ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে অনেকেই খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তার জন্য অপেক্ষারত ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, ইসরায়েলি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে এমন জায়গাগুলো যেখানে সাধারণ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল।

এই পরিস্থিতির মধ্যে আইডিএফ উত্তর গাজার বাসিন্দাদের অবিলম্বে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। এতে গাজা শহর এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সামনে আরও বড় ধরণের সামরিক অভিযান আসতে চলেছে। সামরিক প্রস্তুতি ও জনসাধারণকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টার মাধ্যমে নতুন করে একটি ‘গ্রাউন্ড ইনভেশন’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গাজা এবং ইসরায়েলের মধ্যকার এই চলমান সংঘর্ষ ইতোমধ্যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে রূপ নিয়েছে। ফিলিস্তিনে সাধারণ মানুষের খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের অভাব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও তা ব্যর্থ হয়েছে বারবার। বিশেষত গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরায়েলি বিমান ও ড্রোন হামলা এবং স্নাইপার হামলার কারণে মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ত্রাণ কাফেলাগুলোর ওপর হামলার অভিযোগও উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

একদিকে যেমন ইসরায়েলি সেনাদের একের পর এক হতাহতের ঘটনা দেশটির অভ্যন্তরে উদ্বেগ তৈরি করছে, অন্যদিকে গাজার প্রতিরোধ যোদ্ধারা আধুনিক প্রযুক্তি ও কৌশল ব্যবহার করে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। গাজায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক ডিভাইস বা টানেল হামলা বারবার ইসরায়েলি সেনা ঘাঁটিতে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ঘটাচ্ছে বলে আইডিএফ নিজেই স্বীকার করেছে।

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘর্ষ ক্রমেই জটিলতর হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বারবার ‘মানবিক বিরতি’র আহ্বান এলেও তা বাস্তবায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ইসরায়েল যেমন হামাস ও ইসলামিক জিহাদকে নির্মূল করার প্রত্যয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর লক্ষ্য নিজেদের ভূখণ্ড ও অধিকার রক্ষা করা। এই সংঘাতের মাঝখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিরস্ত্র নারী, শিশু এবং সাধারণ মানুষ।

সাম্প্রতিক এই ঘটনার পর গাজায় ইসরায়েলি অভিযান আরও জোরদার হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের পাল্টা প্রতিরোধেও বেড়েছে তীব্রতা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এখন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছে। কারণ মানবিক সহিংসতা ও রাজনৈতিক অচলাবস্থার এই দুঃসহ বাস্তবতা প্রতিদিনই নতুন প্রাণহানির কারণ হয়ে উঠছে।

এই মুহূর্তে গাজার আকাশে যুদ্ধবিমান, মাটিতে ট্যাংক, আর ঘরে ঘরে শোক—এই বাস্তবতা যেন থামার নাম নিচ্ছে না। মধ্যপ্রাচ্যের এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের একটি রাজনৈতিক সমাধান ব্যতীত নিরীহ মানুষের রক্তপাত থামবে না—এই উপলব্ধি এখন আরও গভীর হয়ে উঠছে গোটা বিশ্বের জন্য।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া