প্রকাশ: ২৬ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইসরাইলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে চীনের ছিংদাও শহরে পৌঁছেছেন। এই সফরে তিনি শাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও) সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে অংশগ্রহণ করছেন, যা ২৬ ও ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকের আয়োজক হিসেবে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন দায়িত্বে রয়েছেন।
বৈঠকের একটি ফাঁকে নাসিরজাদেহ ও দং জুনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হয়। শিনহুয়া সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্থিতিশীলতা রক্ষার আহ্বান জানান।
২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এসসিওতে সদস্যপদ লাভের পর ইরান এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা জোটের অংশ হয়ে উঠেছে। এই নিরাপত্তা জোটের অন্যান্য সদস্য দেশ হলো রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ও বেলারুশ। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাল পরিস্থিতি এবং ন্যাটোর সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলনের গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
চীন দীর্ঘদিন ধরেই এসসিওকে পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক জোটের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে, যেখানে সদস্য রাষ্ট্রদের মধ্যে রাজনীতি, নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং বৈজ্ঞানিক সহযোগিতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এমন সময়ে যখন ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এক সতর্ক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে।
নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো নেতাদের বৈঠকে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন এই বৈঠকে বলেন, ‘বর্তমান শতাব্দীতে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলো দ্রুত এবং ব্যাপক; এর মধ্যেই একতরফা নীতি, আধিপত্যবাদ এবং অন্যদের শাসনের প্রবণতা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ তিনি বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা প্রধানদের আরও সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের পরিবেশ রক্ষায় একত্রে কাজ করার আহ্বান জানান।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এসসিও সদস্য দেশগুলোকে একযোগে কাজ করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ এবং আধুনিক বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’ তিনি আরো যোগ করেন, ‘বর্তমান বিশ্ব একটি বৃহৎ রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে বিশ্বায়ন ধীরে ধীরে তার গতিশীলতা হারাচ্ছে।’
এছাড়াও, সম্মেলনের ফাঁকে চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী দং জুন ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলোউসোভের মধ্যে বৈঠক হয়। শিনহুয়া জানায়, দুই দেশের সম্পর্ক এখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। বেলোউসোভ বলেন, ‘আমাদের মৈত্রীর সম্পর্ক সব ক্ষেত্রেই ঊর্ধ্বমুখী গতিতে এগোচ্ছে।’
যদিও চীন ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের বিষয়ে নিজেকে নিরপেক্ষ পক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে আসছে, তবুও পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে, বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক কার্যত মস্কোকে সমর্থন দিচ্ছে।
এই সফর ও সম্মেলন চলাকালে ইরান আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতিতে নিজের প্রভাব বাড়াতে সচেষ্ট হচ্ছে। ইসরাইলের সঙ্গে চলমান যুদ্ধবিরতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে পরিবর্তনের এই সময়কালে এসসিওর মাধ্যমে ইরান ও তার মিত্রদের এই সংহতি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।