সর্বশেষ :
‘ভাই এডিট করে ছবি দে সমস্যা নাই, জাতের কারও দে’—শবনম ফারিয়ার সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি বার্তা আইইএলটিএসে মাত্র ৭ স্কোর করলেই সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে পড়ার সুযোগ চাল-সবজির বাজারে ঊর্ধ্বমুখী দাম, মুরগি-ডিমে সামান্য শিথিলতা আবার প্রাণ ফিরে পেল রোহিঙ্গা শিক্ষাকেন্দ্র: স্থানীয় শিক্ষক পুনর্বহালের আশ্বাসে আশায় আশ্রয়শিবির স্টোকসের সন্দেহ, জাদেজার ব্যাটিংয়ের ফাঁকে পিচ নষ্টের চেষ্টা! কী বলছেন জাদেজা নিজে? নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রধান শর্ত: ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ ইতিহাসে স্থান পাবে, রাজনীতিতে নয়”: জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. রিপনের ঘোষণা ব্যাংকক বিমানবন্দরে অন্তর্বাসে পাইথন লুকিয়ে প্রাণী পাচারের চেষ্টা, পুরোনো অপরাধী আবারও ধরা আর যেন কোনো স্বৈরাচারী শাসন গড়ে না উঠতে পারে, সেজন্য সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে: নাহিদ জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ‘মব’ নয়, গণতন্ত্র রক্ষায় নিয়োজিত শক্তি: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম

গাজায় রক্তস্রোত: ৪৮ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩০০-র বেশি ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ছে মানবতা

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০২৫
  • ০ বার
গাজায় রক্তস্রোত: ৪৮ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩০০-র বেশি ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ছে মানবতা

প্রকাশ: ৪ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার এবং নির্বিচার হামলায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় নিহত হয়েছেন তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি। প্রতিটি মুহূর্তে বেড়েই চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা, ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে মানুষ, সমাজ ও সভ্যতার বুনন। খাদ্য, আশ্রয় এবং নিরাপত্তার আশায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো পরিণত হয়েছেন নিশানা-বনে যাওয়া শরীর। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারের মিডিয়া অফিসের বরাতে এই মানবিক বিপর্যয়ের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছে কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

গাজা সরকারের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী গত ৪৮ ঘণ্টায় অন্তত ২৬টি পৃথক গণহত্যা চালিয়েছে। এসব হামলার লক্ষ্য ছিল ঘরবাড়ি, বাজার, স্কুল এবং এমনকি খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র, যেখানে সাধারণ মানুষ খাবারের আশায় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন নারী, শিশু এবং অসহায় পুরুষ। এর মধ্যে শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ১১৮ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৫৮১ জন।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা ঘটেছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত খাদ্যসাহায্য কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার ভোরে চালানো এক হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৩ জন, যাঁরা সকালের খাদ্য সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায় একটি অস্থায়ী তাঁবুতে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। গাজার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত মুস্তাফা হাফেজ স্কুল, যেখানে বাস্তুচ্যুতরা আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেখানে ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৬ জন। আহতদের কেউ কেউ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে, অনেকের পরিচয় এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

আশ্রয়প্রার্থী আহমেদ মনসুর তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “ভোরের দিকে হঠাৎ এক তীব্র বিস্ফোরণে ঘুম ভেঙে যায়। মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে। কেউ বলল ড্রোন হামলা, কিন্তু শব্দ এমন ভয়ঙ্কর ছিল যে কানে তালা লেগে গিয়েছিল। আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ পুড়ে যায়, কেউ কাউকে সাহায্য করতে পারছিল না।”

গাজায় অবস্থানরত আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম বলেছেন, “মানুষ সারাদিন ক্ষুধার্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে একটু খাবারের আশায়। আর হঠাৎ বুলেট বর্ষণ শুরু হয়। কোনো আগাম সতর্কতা নেই। এমনভাবে গুলি চলে, যেন কেউই রেহাই পাবে না। আহতদের সাহায্য করতে ইমার্জেন্সি টিমও সময়মতো পৌঁছাতে পারে না, কারণ হামলার ভয় থাকেই।”

এই রক্তাক্ত বাস্তবতা সামনে এনে গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস স্পষ্ট করে জানিয়েছে, “ইসরায়েলের এই সামরিক আক্রমণগুলো কোনোভাবেই ‘লড়াই’ নয়, বরং এটি একটি জনসংহার, যাকে আর যুদ্ধে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। বেসামরিক মানুষ, শিশু, নারী এবং খাদ্যের সন্ধানে থাকা মানুষদের যে পরিকল্পিতভাবে নিশানা বানানো হচ্ছে, তা মানবতাবিরোধী অপরাধ ছাড়া আর কিছু নয়।”

এদিকে, গাজায় পরিচালিত জিএইচএফ (Gaza Humanitarian Foundation)-এর কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা নিয়ে উঠেছে গুরুতর প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, এসব কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা মার্কিন ঠিকাদারদের নিরাপত্তাকর্মীরা ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড় ঠেকাতে ব্যবহার করছে তাজা গুলি ও স্টান গ্রেনেড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন ঠিকাদার জানান, এসব নিরাপত্তাকর্মীরা অধিকাংশই অপরিচিত, অযোগ্য এবং অতিরিক্ত অস্ত্রধারী, যারা কোনো ধরনের জবাবদিহিতা ছাড়াই কাজ করছে।

যদিও এই অভিযোগকে পুরোপুরি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে জিএইচএফ। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করি। ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও উপস্থিত কর্মীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হয়েছি, এপি-র রিপোর্ট সত্যনিষ্ঠ নয়।”

তবে এই পাল্টাপাল্টি বিবৃতি ও দায়-অস্বীকারের মধ্যেও সত্য রয়ে গেছে অমোচনীয় রক্তাক্ত দৃশ্যপটের মধ্যে—যেখানে একটি ক্ষুধার্ত শিশু মায়ের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, একজন আহত নারী কান্নায় আর্তনাদ করছেন, অথচ আশপাশে কেউ নেই সাহায্যের জন্য। মানবতা আজ সেখানে নিথর, নিঃশব্দ।

এই হামলাগুলো নতুন কোনো ইতিহাস নয়, কিন্তু প্রতিটি হামলার পেছনে চাপা পড়ে যাচ্ছে শত শত নাম-না-জানা মানুষের গল্প, যাদের জীবনের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তা ও বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টিকটুভাবেই এই হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিচ্ছে।

গাজায় এ মুহূর্তে যা ঘটছে, তা শুধু একটি অঞ্চল বা জাতির সংকট নয়, এটি পুরো মানব সভ্যতার ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। এবং এই ব্যর্থতার দায় আমরা কেউ এড়াতে পারি না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া