প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার পুরোনো অভিযোগে অভিযুক্ত এক শ্রীলঙ্কান নাগরিক আবারও হাতেনাতে ধরা পড়েছেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সুয়ান্নাভুমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। এবারও তার কৌশল ছিল অভিনব—নিজের অন্তর্বাসে লুকিয়ে পাচার করছিল তিনটি জীবন্ত পাইথন সাপ।
থাইল্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক ও দেশটির জাতীয় উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দপ্তরের যৌথ অভিযানে তাকে আটক করা হয়। দেশটির বন্যপ্রাণী অপরাধ গোয়েন্দা কেন্দ্রের পরিচালক ফোনলাভি বুচাকিয়েত গতকাল (৩ জুলাই) রাতে এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পাচারকারী ব্যক্তি শ্রীলঙ্কার নাগরিক ‘শেহান’, যিনি ২০২৪ সালে কলম্বোতে বিরল প্রজাতির নানা বন্যপ্রাণী পাচারের দায়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সে সময় তার কাছ থেকে বল পাইথন, নেকড়ে, মিরক্যাট, সুগার গ্লাইডার, ব্ল্যাক ককাটিয়েল, সজারু, ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডার ও কচ্ছপসহ অসংখ্য প্রাণী জব্দ করা হয়।
বন্যপ্রাণী গোয়েন্দা সংস্থার হাতে আগে থেকেই তথ্য ছিল যে শেহান আবার থাইল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারেন। সেই সূত্রেই তারা ১ জুলাই রাত ১২টা ৬ মিনিটে ব্যাংককে পৌঁছানো ওই ব্যক্তির ওপর নজরদারি শুরু করে। ঠিক একদিন পর, ২ জুলাই সন্ধ্যায় শেহান ব্যাংকক ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়ে সুয়ান্নাভুমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান এবং থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে চেক-ইন করেন।
লাগেজ এক্স-রে স্ক্যান করে কোনো সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয় তার শরীরে। তখনই ফাঁস হয় তার অভিনব কৌশল—একটি পাতলা জালে মোড়ানো তিনটি বল পাইথন সাপ লুকিয়ে রেখেছিলেন তিনি নিজের অন্তর্বাসের ভেতর।
থাই ওয়াইল্ডলাইফ কর্তৃপক্ষ ফেসবুক পোস্টে এই ঘটনার ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে—সাপগুলোকে অত্যন্ত সংকীর্ণ ও অক্সিজেনবিহীন পরিবেশে রাখা হয়েছিল। এভাবে পাচারকৃত প্রাণীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যও মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
ঘটনার পরপরই শেহানকে আটক করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে পশু নির্যাতন ও বন্যপ্রাণী পাচারের ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আরও কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি আন্তর্জাতিক পাচারচক্রের অংশ, যা বিরল ও বিপন্ন প্রাণীগুলোকে অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে পাচার করে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলোর দাবি, এ ধরনের ঘটনা বন্যপ্রাণীর প্রতি নির্মমতা প্রদর্শনের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। পাশাপাশি, যেভাবে প্রাণীগুলো লুকিয়ে পাচার করা হয়, তা কেবল বন্যপ্রাণীর জন্যই নয়, যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্যও চরম হুমকি। আন্তর্জাতিক পরিবেশবাদী ও প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনার পর থাই বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ও তল্লাশির পদ্ধতি আরও কঠোর করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে বলেও নিশ্চিত করেছে থাইল্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ এনফোর্সমেন্ট নেটওয়ার্ক।
একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে তথ্য বিনিময় বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক প্রাণী পাচার চক্রের মূল উৎস ও চ্যানেল শনাক্ত করে তা দমন করার ওপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।