প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর আবারও বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রাম জেলায়। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও তিনজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো আজ শুক্রবার বিকেলের প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৩ জুলাই সকাল থেকে ৪ জুলাই সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানের ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তার মধ্যে তিনজনের দেহে করোনা পজিটিভ ধরা পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন শেভরন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এবং একজন মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নমুনা প্রদান করেন। তবে তাদের সকলেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন এবং পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে জানা গেছে।
চট্টগ্রামে জুন মাসের শুরু থেকেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়ছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সতর্ক করে আসছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের শুরুতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র চট্টগ্রাম জেলাতেই করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১৭৪ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন সাতজন। যদিও করোনা সংক্রমণ শুরুর প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এলেও, চট্টগ্রামে সম্প্রতি এ সংখ্যা নতুন করে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নমুনা পরীক্ষার হার সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। যদিও নমুনা পরীক্ষার পরিমাণ এখনো আশানুরূপ নয় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, করোনা সংক্রমণের পুনরায় উত্থান রোধে আগেভাগেই সচেতনতা, পরীক্ষার হার বৃদ্ধি এবং সঠিক পরিসংখ্যান নির্ধারণ অত্যন্ত জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা সর্দি-কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত, তাদের অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত। একই সঙ্গে আবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং যেসব স্থানে আক্রান্তের হার বাড়ছে, সেসব জায়গায় মাস্ক ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জেলা ও মহানগর এলাকায় নতুন করে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে যেকোনো সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য।
করোনাভাইরাসের প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্বিতীয় বা তৃতীয় তরঙ্গের সময় জনগণ অনেক বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠেছিল। তবে এই মুহূর্তে মানুষের মধ্যে করোনাবিষয়ক সতর্কতা আবারও শিথিল হতে দেখা যাচ্ছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে সংক্রমণ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হতে পারে।
সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলো করোনা টেস্ট, আইসোলেশন ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার প্রস্তুতি আবারও সক্রিয় করতে শুরু করেছে। একইসঙ্গে সংক্রমণ বাড়ার এই ধারা রোধে নতুন করে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকলেও করোনা এখনো পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। সুতরাং, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত টেস্ট করানোই হতে পারে এই ভাইরাস প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।