প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন করে আলোচনায় এসেছে দেশের ফুটবল প্রশাসন। জাতীয় দলের প্রধান কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার পদত্যাগ চাওয়ায় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীনকে জাতীয় দল কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়েছে বাফুফে। শুক্রবার বাফুফে সভাপতি ও জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান তাবিথ আউয়ালের স্বাক্ষরিত একটি অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে এই অব্যাহতির বিষয়টি জানানো হয়।
চিঠিতে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ উল্লেখ না থাকলেও, বাফুফের ভেতরের সূত্র এবং ফুটবল সংশ্লিষ্টদের অভিমত থেকে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে, জাতীয় দলের কোচ কাবরেরা নিয়ে শাহীনের স্পষ্ট অবস্থান এবং তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করাই মূলত তাকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে। এ সিদ্ধান্ত ঘিরে দেশের ফুটবল অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জাতীয় দল কমিটি বাফুফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলোর একটি। ফেডারেশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই কমিটিতে ৯ জন সদস্য থাকার কথা থাকলেও, সভাপতি তাবিথ আউয়াল সেখানে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ১২ জনে উন্নীত করেন। শাহীনকে অব্যাহতি দেওয়ার পর বর্তমানে কমিটিতে রয়েছেন ১১ জন সদস্য।
যদিও জাতীয় দল কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহীন এখনো বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে বহাল আছেন। বাফুফের চিঠিতে জানানো হয়, তিনি ফুটবলের সার্বিক উন্নয়নে সংযুক্ত থাকবেন, তবে জাতীয় দল সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্তে তার আর ভূমিকা থাকবে না।
বাফুফের অভ্যন্তরীণ এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে গত ১৪ জুন, যখন এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তাদের সামনেই কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করেন শাহীন। তার এমন বক্তব্যে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল তীব্র অস্বস্তি ও বিব্রতবোধ করেন বলে জানা যায়। শাহীনের এই বক্তব্যকে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ভঙ্গ হিসেবে দেখেছে বাফুফে প্রশাসন।
প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন স্প্যানিশ নাগরিক হ্যাভিয়ের কাবরেরা। তার মেয়াদে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অর্জন না থাকলেও, ২০২৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। তবে সামগ্রিকভাবে তার কোচিং কার্যক্রম এবং বিশেষ করে দল নির্বাচনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার। হামজা চৌধুরী ও সামিত সোমের মতো প্রতিভাবান ফুটবলার দলে যুক্ত হওয়া সত্ত্বেও ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয় না পাওয়ায় কাবরেরার কৌশল নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে।
ফুটবল অঙ্গনের অনেকেই হংকংয়ের বিপক্ষে পরবর্তী ম্যাচের আগে কোচ কাবরেরার বিদায় প্রত্যাশা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে তার বিপক্ষে স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া শাহীনকে কমিটি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাকে অনেকে দেখছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর চাপ সৃষ্টির একটি নজির হিসেবেও।
ফুটবলের মাঠের বাইরের এই সিদ্ধান্ত আবারও প্রশ্ন তুলেছে—বাংলাদেশ ফুটবলে আদৌ গণতান্ত্রিক মতের মূল্য আছে কি না, নাকি মতভেদ মানেই বিচ্ছিন্নতা? এখন সময় বলে দেবে, এই পরিস্থিতি দলের পারফরম্যান্সে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, বাফুফে এখন শুধু ফুটবল নয়, নেতৃত্বের দিক থেকেও এক টালমাটাল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।