প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
এজবাস্টনের সূর্য যেন দ্বিতীয় দিনের খেলার মাঝে এক সময় গাঢ় হয়ে উঠেছিল বিতর্কের ছায়ায়। মাঠে দারুণ ছন্দে থাকা ভারতের অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে হঠাৎ করেই উত্তেজনা ছড়ায় ইংলিশ শিবিরে। ইংল্যান্ডের পেসার ক্রিস ওকস অভিযোগ তোলেন, জাদেজা বারবার ‘ডেঞ্জার জোনে’ বা পিচের নিষিদ্ধ অংশে পা রাখছেন, ফলে উইকেটের সেই স্পর্শকাতর জায়গায় দাগ তৈরি হচ্ছে। ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকসও সরাসরি এ নিয়ে জাদেজার সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সন্দেহ, জাদেজা পরবর্তীতে নিজের বোলিংয়ের সুবিধার্থেই এসব করছেন।
মাঠে থাকা ক্যামেরায় ধরা পড়ে, স্টোকস ক্ষুব্ধ ভঙ্গিতে জাদেজার দিকেই ইঙ্গিত করে বলেন, “দেখো তো তুমি কী করেছ, বন্ধু!” উত্তরে জাদেজা নীরব থাকেননি। শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমি তো এই দিক থেকেই আসছিলাম, যেখানে বল করার কথাও না। আমি ব্যাটিং করছি, পিচ নষ্ট করার ইচ্ছা থাকলে কি সেটা এত সহজে ধরা পড়ত?”
এ বিষয়ে দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনেও মুখ খুলেছেন জাদেজা। তাঁর ভাষ্যে পরিষ্কার প্রতিধ্বনি শোনা গেছে, তিনি কোনো কৌশলী দুরভিসন্ধির আশ্রয় নেননি। “স্টোকস ভেবেছে আমি পিচ খারাপ করছি। অথচ ওরা পেসার দিয়ে বারবার বল করে পিচেই চাপ ফেলছে, ওটা নিয়ে তো কেউ কিছু বলছে না! আমি তো বলেই করিনি, কেবল ব্যাটিংয়ে ছিল মনোযোগ। দু-একবার হয়তো পা পিছলে গেছে বা কিছুটা এদিক-ওদিক দৌড়েছি, কিন্তু সেটা ইচ্ছাকৃত ছিল না,” বলেন তিনি।
উল্লেখযোগ্য হলো, বিতর্কের মধ্যেই দিনটিতে ব্যাট হাতে অসাধারণ পারফর্ম করেছেন জাদেজা। শুবমান গিলের সঙ্গে তাঁর ২০৩ রানের জুটি ভারতের ইনিংসের মূল স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। জাদেজা নিজে ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছেন দৃঢ় মনোবলে। ভারতের সংগ্রহ গিয়ে দাঁড়ায় ৫৮৭ রানে। ইংল্যান্ড দিন শেষ করে ৩ উইকেটে ৭৭ রানে।
তবে ক্রিকেট মাঠে ‘ডেঞ্জার জোন’ সংক্রান্ত নিয়ম সবসময়ই স্পর্শকাতর এবং বিতর্কিত। একজন ব্যাটসম্যান যদি বারবার সেই অংশে দৌড়ান বা দাঁড়ান, তাহলে সেটা ভবিষ্যতে স্পিনার বা মিডিয়াম পেসারদের বাড়তি সুবিধা এনে দিতে পারে। অতীতেও বহুবার এমন অভিযোগ উঠেছে, আবার তা অনেক সময়েই খারিজও হয়েছে আম্পায়ারদের পর্যবেক্ষণে।
তবে এটুকু নিশ্চিত, জাদেজা এই বিতর্কে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করেছেন এবং বারবার বলছেন, তার উদ্দেশ্য শুধুই খেলায় মনোযোগ দেওয়া, কোনো ফাঁকিবাজি নয়।
এই ঘটনায় আইসিসি বা ম্যাচ রেফারির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে এমন বিতর্ক ভবিষ্যতে আরও তীক্ষ্ণ নজরদারি বাড়াবে পিচ ব্যবহারে, এমনটা বলাই যায়। আর মাঠে জাদেজার আত্মবিশ্বাস, স্টোকসের সন্দেহ এবং আম্পায়ারের নিষ্ক্রিয়তা—তিনটি মিলে নতুন করে আলোচনায় এসেছে খেলাধুলার অদৃশ্য মানসিক লড়াই।
এখন দেখার বিষয়, তৃতীয় দিনে বল হাতে নামলে জাদেজা সত্যিই সেই ‘ডেঞ্জার জোন’ থেকে সুবিধা আদায় করতে পারেন কিনা—তবে এক্ষেত্রে বিতর্ক থাকবে ঠিকই, তবে জবাব মিলবে কেবল মাঠেই।