প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
যুদ্ধের নিষ্ঠুর বাস্তবতা কেবল রক্তপাতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, তার ছায়া দীর্ঘসময় ছড়িয়ে থাকে শোক, ক্ষুধা ও আর্তনাদে। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে এখনকার বাস্তবতাও তার ব্যতিক্রম নয়। অব্যাহত হামলা, ক্ষুধা, খাদ্য সংকট এবং মৃত্যু যেন প্রতিদিনের এক নিত্যনৈমিত্তিক উপাখ্যান হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নির্মম পরিস্থিতির আরেক হৃদয়বিদারক প্রমাণ দেখা গেল আজ শুক্রবার, যখন দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একটি ত্রাণকেন্দ্রের পাশে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারান এক তরুণ, যিনি শুধু পরিবারের জন্য আটা আনতে বের হয়েছিলেন।
আল জাজিরার লাইভ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আজকের হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। কিন্তু সংখ্যার পেছনে যে অসহনীয় মানবিক গল্পগুলো চাপা পড়ে যায়, তারই একটি মুহূর্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি ছোট ফিলিস্তিনি মেয়ে, যার কান্না আজ যেন পুরো পৃথিবীর বিবেককে নাড়িয়ে দেওয়ার মতো।
ভাইয়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়া মেয়েটির এই করুণ বিলাপ ধরা পড়ে ফ্রিল্যান্স ফিলিস্তিনি ফটোসাংবাদিক দোয়া আলবাজের পোস্ট করা ভিডিওতে। ফুটেজে দেখা যায়, ক্ষীণকণ্ঠে বারবার বলছে— “আমাদের কী পাপ? আমরা কেন ক্ষুধায় মরব?” চোখভেজা সেই প্রশ্নে যেন গোটা বিশ্ববাসীর কাছে একটি সোজা, তবুও সবচেয়ে কঠিন জবাব চাইছে ছোট্ট মেয়েটি।
সে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে আরও বলছে— “আমার বড় ভাই… আমার হৃদয়ের আত্মা। আমাকে ক্ষমা করো, আমার ভাই, যদি আমি কখনো তোমাকে বিরক্ত করে থাকি…” পাশে থাকা বয়স্ক নারীরা ছোট মেয়েটিকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু মৃত্যুর ক্ষরণে ভারাক্রান্ত মনটিকে কে বা পারে সামলে রাখতে?
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, নিহত এই তরুণ ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের একজন ছাত্র। তার বয়স মাত্র ১৯ বছর। পারিবারিক খাদ্য সংকট কিছুটা মেটাতে সে গিয়েছিল একটি ত্রাণকেন্দ্রের দিকে। কিন্তু সেই পথেই ওঁৎ পেতে ছিল ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মমতা, যার ফলে আর কখনও বাড়ি ফেরা হলো না তার।
এই ভিডিওটি শুধু একটি যুদ্ধের নয়, বরং গোটা মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আল জাজিরার সনদভুক্ত ফ্যাক্টচেকিং ইউনিটের যাচাই অনুযায়ী ফুটেজটি সঠিক এবং ঘটনাটি বাস্তব।
ইসরায়েলি বাহিনীর এমন আচরণ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবিকতার পরিপন্থী বলে মনে করছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। আন্তর্জাতিক মহল থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না বরং প্রতিদিনই নতুন নতুন হত্যাযজ্ঞ আর শিশুদের আর্তনাদে রক্তাক্ত হচ্ছে গাজার মাটি।
এই ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দেয়, মানবিক সংকট যত না রাজনৈতিক, তার চেয়েও অনেক বেশি মানবের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রশ্ন। যেখানে একটি শিশু তার ভাইয়ের রক্তাক্ত দেহের পাশে দাঁড়িয়ে শুধু একটিই প্রশ্ন করছে— “আমাদের কী পাপ?”
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো এখনও অনেকের কাছে নেই। কিন্তু এই প্রশ্নটিই এখন সময়ের সবচেয়ে জরুরি বিবেক।