প্রকাশ: ০৪ জুলাই ‘২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ আবারও দগ্ধ হলো রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায়। শুক্রবার রাতভর শহরজুড়ে চালানো ভয়াবহ এই হামলায় কেঁপে ওঠে পুরো কিয়েভ। শহরের অন্তত এক ডজনেরও বেশি জায়গায় আঘাত হানে বিস্ফোরণ, যার মধ্যে আবাসিক ভবনও রয়েছে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা গেছে, হামলায় অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তাইমুর তাকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, বেশ কিছু বহুতল আবাসিক ভবন আংশিক ধসে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় শহরের দুইটি প্রধান জেলা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এর কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি দীর্ঘ টেলিফোনালাপ করেছেন, তবে যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরপরই রাতভর চলে কিয়েভে ভয়াবহ হামলা, যা নতুন করে রুশ আগ্রাসনের মাত্রা বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
শুক্রবার ভোররাতে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানায়, কিয়েভের দিকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। তাদের সতর্কবার্তায় বলা হয়, অন্তত একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শহরের দিকে ছুটে এসেছে, এবং বিস্ফোরণের শব্দ শুনেই বোঝা গেছে তা লক্ষ্যভেদ করেছে।
সিএনএনের স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, শহরের কেন্দ্রস্থলে আকাশে ছড়িয়ে পড়ে কালো ধোঁয়ার মেঘ। হামলার সময় কিয়েভের আকাশে ড্রোনের শব্দও শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এই হামলা সাম্প্রতিক রুশ আক্রমণের ধারাবাহিকতায় আরও এক ভয়াবহ সংযোজন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জুন মাসেই রাশিয়া ৩৩০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০টি ছিল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এ ছাড়া প্রায় ৫ হাজার ড্রোন এবং ৫ হাজারেরও বেশি গ্লাইডিং বোমা ব্যবহার করা হয়েছে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডে হামলার জন্য।
ইউক্রেন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার এসব ধারাবাহিক হামলা আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের শামিল। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলা সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে তাদের সামরিক নেতৃত্ব পূর্ব ইউক্রেন ও কিয়েভে ‘কৌশলগত অভিযানের অংশ’ হিসেবে এসব হামলার যৌক্তিকতা তুলে ধরছে বলে রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো দাবি করেছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ ঘিরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প এর আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে নিজেকে সক্রিয় ভূমিকার প্রতিশ্রুতি দিলেও, সমালোচকরা বলছেন, তিনি রাশিয়ার অবস্থানের প্রতি অতিমাত্রায় নমনীয়।
এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই যুদ্ধে কবে আসবে অবসান? আর কিয়েভের বাসিন্দাদের কাছে, এই রাতটি ছিল যুদ্ধের আরেকটি নিকৃষ্ট স্মৃতি, যা হয়তো দীর্ঘদিন তাদের মানসপটে দগদগে ঘায়ের মতো জ্বলবে।