প্রকাশ: ২ জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগের প্রস্তাব তুলে ধরেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেটে তিনি দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে আলোচিত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী তরুণদের জন্য ১০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই বরাদ্দের উদ্দেশ্য হল দেশের পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা এবং তাঁদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি কার্যকর আর্থিক ভিত্তি তৈরি করা।
ড. সালেহউদ্দিন তাঁর বাজেট বক্তৃতায় বলেন, “যুব সমাজের অমিত শক্তি ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দক্ষ যুবশক্তি গড়ে তোলা এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। এই ধারাবাহিকতায় আমরা একটি বিশেষ তহবিল গঠন করছি, যা হবে ১০০ কোটি টাকার।” এই অর্থ তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ আকারে বিতরণ করা হবে, যার ঋণসীমা সর্বোচ্চ পাঁচ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের পরিবারকে আত্মকর্মসংস্থানের আওতায় আনতে আলাদা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী বছরেও ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপন এবং নতুন প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আরও ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। তরুণদের জন্য এ ধরনের বাজেট বরাদ্দ দেশের বাজেট ইতিহাসে এই প্রথম, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাজেট বক্তৃতায় সামাজিক সুরক্ষার আওতা বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন হারে বয়স্ক ভাতা ৬৫০ টাকা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের ভাতা ৬৫০ টাকা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা ৯০০ টাকা এবং মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা ৮৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইসঙ্গে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর ভাতাও ৬৫০ টাকায় উন্নীত করার কথা বলা হয়।
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন, যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালন ও অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বেতন কাঠামো নিয়ে তিনি বলেন, “২০১৫ সালের পর আর কোনো বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়নি। এ কারণে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধি করছি।” যদিও পূর্ণাঙ্গ পে-স্কেল ঘোষণার ইঙ্গিত দেয়া হয়নি, তবে এটি প্রাথমিকভাবে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৩.৬ শতাংশ। এর মধ্যে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা আসবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং বাকি ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে বৈদেশিক উৎস থেকে। সুদ পরিশোধের জন্য নির্ধারিত বাজেট ১ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য সরকার রাজস্ব আহরণ, বৈদেশিক সহায়তা এবং উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে যৌথ উদ্যোগকে অগ্রাধিকার দেবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা।
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ভেতরে সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক কাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে এবারের বাজেট অনেকাংশে তরুণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্রে রেখে গঠিত হয়েছে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, অন্যদিকে জাতীয় অর্থনীতিও পাবে এক নতুন গতি।