প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা খুব কমই দেখা যায় যেখানে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মাঝেও দলীয় স্কোর চারশ পেরিয়ে যায়। কিন্তু এবার ঠিক সেটাই করে দেখাল ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে এজবাস্টন টেস্টে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪০৭ রান করেই ইংল্যান্ড হয়ে উঠেছে ইতিহাসের অংশ, আর বাংলাদেশ হারাল একটি অদ্ভুত অথচ গর্বের রেকর্ড।
শুক্রবার শুরু হওয়া এজবাস্টন টেস্টে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের ৬ জন ব্যাটসম্যান শূন্য রানে ফিরেছেন। টেস্ট ইতিহাসে এটাই প্রথমবার, যখন কোনো দলের ৬ ব্যাটসম্যান ‘ডাক’ মেরে ফিরলেও দলীয় সংগ্রহ ৪০০ ছাড়িয়েছে। এর আগে এই রেকর্ডটি ছিল বাংলাদেশের দখলে। ২০২২ সালের মে মাসে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমনই এক ইনিংস খেলেছিল টাইগাররা। সেদিনও ৬ ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হয়েও দল করেছিল ৩৬৫ রান।
ইংল্যান্ডের ইনিংসটা দেখতে গেলেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যই দলকে টেনে তুলেছে অতল গহ্বর থেকে। ম্যাচের শুরুর দিকে একের পর এক ব্যাটসম্যান ফিরছিলেন হতাশাজনকভাবে। বেন ডাকেট, ওলি পোপ, অধিনায়ক বেন স্টোকস, ব্রাইডন কার্স, জশ টাং এবং শোয়েব বশির শূন্য রানে ফিরেছেন। কিন্তু একপাশ আগলে রেখে খেলতে থাকেন হ্যারি ব্রুক এবং উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান জেমি স্মিথ।
এই দুজন গড়েন ৩০৩ রানের বিশাল জুটি, যা ইংল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। হ্যারি ব্রুকের ১৫৮ রানের ইনিংস এবং স্মিথের অপরাজিত ১৮৪ রানে ভর করেই ইংল্যান্ড ছুঁয়ে ফেলে ৪০৭ রানের গণ্ডি। এই ইনিংসে শুধু ব্রুক-স্মিথ জুটিরই অবদান ৩৪২ রান, যা পুরো দলের স্কোরের প্রায় ৮৪ শতাংশ। বাকি নয় ব্যাটসম্যান এবং অতিরিক্ত রান মিলিয়ে আসে মাত্র ৬৫ রান।
তিন বছর আগে এমন দৃষ্টান্তই স্থাপন করেছিলেন বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম এবং লিটন দাস। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ২৪ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর দুজনে মিলে গড়েছিলেন ২৭২ রানের জুটি। মুশফিকুর রহিম ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন, আর লিটন দাস করেন ১৪১ রান। দল করেছিল ৩৬৫, যার ৮৬.৫৮ শতাংশই এসেছিল এই দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে।
তবে তখন যেমন শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ, তেমনি এজবাস্টনে ইংল্যান্ডের ভাগ্য কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে যাই হোক, এই ইনিংস টেস্ট ক্রিকেটে ব্যতিক্রমী এবং অনুপ্রেরণাদায়ী নজির হয়ে থাকবে। শূন্য রানের দাপটের মাঝেও কীভাবে ব্যাট হাতে সম্মানজনক সংগ্রহ দাঁড় করানো যায়, তা ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের ব্রুক-স্মিথ জুটি দেখিয়ে দিয়েছে দুর্দান্তভাবে।
এই ইনিংস প্রমাণ করে, ম্যাচে সাফল্য পেতে পুরো দলের ব্যাটিং লাইনআপ নয়, মাঝে মাঝেই প্রয়োজন হয় দুই-তিনজনের ব্যতিক্রমী ইনিংস। আর সেখানেই লেখা হয়ে যায় নতুন ইতিহাস, আর বদলে যায় পুরনো রেকর্ডের মালিক।