প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও পুনরায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্ব বাণিজ্য অঙ্গনে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন সোমবার থেকে ১২টি দেশের ওপর নতুন আমদানি শুল্ক কার্যকর হবে। ট্রাম্প নিজেই জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই তিনি এসব শুল্ক আরোপের প্রস্তাব সম্বলিত ১২টি আলাদা চিঠিতে সই করেছেন এবং সেগুলো সোমবার প্রকাশিত হবে।
নিউ জার্সি সফরের সময় প্রেসিডেন্টের বিমান ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এ সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে ট্রাম্প তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, “আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ চিঠিতে সই করেছি এবং সেগুলো সোমবারই প্রকাশিত হবে— সম্ভবত ১২টি দেশের উদ্দেশ্যে।”
তবে এই শুল্ক আরোপের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের কী লক্ষ্য রয়েছে, কোন কোন খাত এতে প্রভাবিত হবে, কিংবা এই শুল্ক হার কতটুকু হবে— এসব বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এখনও বিস্তারিত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ট্রাম্প তার মন্তব্যে শুল্কের বিষয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা বজায় রেখেই বলেন, “বিভিন্ন রকমের অর্থ, বিভিন্ন মাত্রার শুল্ক আরোপ করা হবে।” এর অর্থ, বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ভিন্ন ভিন্ন হারে শুল্ক বসতে যাচ্ছে, যার মাত্রা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট দেশের আমদানি নীতিমালা ও মার্কিন স্বার্থের উপর।
বিশ্ববিখ্যাত সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এ বিষয়ে জানিয়েছে, শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে শুল্ক আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছিল। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপানের মতো বড় বড় বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সংলাপে বারবার মতানৈক্য ও জটিলতা দেখা দিলে প্রেসিডেন্ট সেই আলোচনাকে ‘অফিসিয়াল জটিলতা’ আখ্যা দিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
শুক্রবার রাতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “আলোচনার চেয়ে চিঠি পাঠানো অনেক সহজ। এই চিঠিগুলো বেশি কার্যকর।” তার কথার মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, এ ধরনের একতরফা শুল্ক আরোপ তার প্রশাসনের একটি সক্রিয় কৌশল হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই নতুন শুল্ক নীতির কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য আবারও চাপে পড়তে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশ মার্কিন বাজারে বড় পরিসরে রপ্তানি নির্ভর করে, তাদের জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে, এই পদক্ষেপকে মার্কিন নির্বাচনী রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও অনেকে দেখছেন। ২০২৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে ট্রাম্প ফের বাণিজ্য ও অভ্যন্তরীণ শিল্প সংরক্ষণের ইস্যুকে সামনে টেনে আনছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
যদিও এখনো পর্যন্ত সেই ১২টি দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি, তবে অনুমান করা হচ্ছে এতে চীন, মেক্সিকো, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও জাপানসহ বেশ কয়েকটি বড় রপ্তানিকারক দেশ থাকতে পারে।
বর্তমানে বিশ্ব বাজার যেখানে নানা সংকটে রয়েছে— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তেল বাজারে অস্থিরতা, খাদ্য নিরাপত্তা সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে— সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এধরনের কঠোর বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্ব নেতারা এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে গভীর নজর রাখছে। তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ কতটা টেকসই হয় বা ভবিষ্যতে এর প্রভাব কেমন হয়, সেটি নির্ভর করবে সোমবার ঘোষিত সেই চিঠিগুলোর বিস্তারিত তথ্যের উপর। সেই ঘোষণার অপেক্ষায় এখন গোটা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঙ্গন।