প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে জানান, ইরান এখনও তার পরমাণু কর্মসূচির আন্তর্জাতিক পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি এবং ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করতে সম্মত হয়নি। যদিও ইরানের সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শক্তিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পরমাণু বিষয়ক আলোচনায় জড়িত, তবুও বর্তমান অবস্থায় পারস্পরিক আস্থা কমে যাওয়ার ফলে প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধানে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
গত শুক্রবার হোয়াইট হাউসে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের পর নিউ জার্সি যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, “সাম্প্রতিক মার্কিন-ইসরায়েলি যৌথ বিমান হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে তাদের পরমাণু কার্যক্রম ‘স্থায়ীভাবে পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়েছে’। তবে আমি স্বীকার করি, তারা অন্য কোনো স্থানে এই কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে পারে, যা বড় সমস্যা সৃষ্টি করবে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ইরান এই পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তার কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়, যা মধ্যপ্রাচ্যের ভারসাম্য এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২২ জুনের হামলার পর স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, ইরানের নাতাঞ্জ কেন্দ্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ছবি সরবরাহ করেছে Maxar Technologies, যা হামলার পরপরই বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়বস্তু হয়।
ট্রাম্প আরও জানান, ইরানি কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনো বৈঠকের দিন বা সময় নির্ধারিত হয়নি। সূত্রগুলো বলছে, এই বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আগামী সোমবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে উচ্চস্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গাজায় চলমান সংঘর্ষ এবং সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মার্কিন ও ইসরায়েলি নেতৃত্বের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বর্তমান উত্তেজনার মধ্যে এক বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। তবে ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যে সুগভীর সমন্বয় রয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন।
ইরান দীর্ঘদিন ধরে পরমাণু বিষয়ক ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখোমুখি। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি (JCPOA) স্বাক্ষরিত হলেও পরবর্তী সময়ে মার্কিন প্রশাসনের পরিবর্তনের ফলে এই চুক্তি ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকে ইরান আবারও তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়ছে, বিশেষ করে ইসরায়েল ও প্রতিবেশী আরব দেশগুলো। তারা ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকে অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য বড় হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। তাই মার্কিন ও ইসরায়েলি যৌথ হামলা এবং কূটনৈতিক উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ইরানের সঙ্গে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও আলোচনার মাধ্যমে পারমাণবিক কর্মসূচির শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা জরুরি, যাতে একটি বিস্ফোরক সংঘাত এড়ানো যায়। তবে ইরানের স্থির অস্বীকৃতি ও অস্ত্রচালনার কর্মকাণ্ড পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে।
অন্যদিকে, গাজায় চলমান সংঘর্ষের উত্তেজনাও বৈশ্বিক রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলছে। ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক সংকট মোকাবিলার জন্য তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বারংবার জোর দিয়েছে।
আগামী দিনের হোয়াইট হাউস বৈঠক এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মার্কিন নীতির স্পষ্ট ছবি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতার জন্য পারমাণবু বিষয়ে কড়া নজরদারি এবং গাজার পরিস্থিতি নিয়ে কার্যকর কূটনৈতিক সমাধান জরুরি। অন্যথায়, এই অঞ্চলে বড় ধরনের সংকট এবং সম্ভাব্য সংঘাত অচিরেই নতুন মাত্রায় পৌঁছাতে পারে।
সুতরাং, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইরানের ওপর অভিযোগ এবং ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এখন দৃষ্টিপাত করে অপেক্ষায় রয়েছে, যে আগামী বৈঠক থেকে কী ফলাফল বের হয় এবং তা বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলে।