প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদমাধ্যম ‘ঠিকানা’-র এক অনুষ্ঠানে মুখোমুখি আলাপচারিতায় অংশ নেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির ও বরিশালের আলোচিত ধর্মীয় নেতা মুফতি ফয়জুল করিম। সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দিন তার রাজনৈতিক দল নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দেন— “আপনারা কি চাঁদা নেন? দল চালাতে চাঁদার ভাগবাটোয়ারায় আপনারাও অংশ নেন?” এমন জিজ্ঞাসায় সামান্য থেমে গিয়েও কঠিন অথচ দ্ব্যর্থহীন জবাব দেন শায়খে চরমোনাই নামে পরিচিত এই ইসলামি নেতার। বলেন, “আমরা দিই, নেই না।”
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের বিশাল সমাবেশ ঘিরে জনমনে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলোর বেশ কয়েকটিই উঠে আসে এই সাক্ষাৎকারে। শায়খে চরমোনাই জানান, ২৮ জুন অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে ঠিকই, তবে সেই অর্থ কোনো গোপন উৎস থেকে নয়— এসেছে তাদের নেতা-কর্মীদেরই হাত থেকে। তার ভাষায়, “অনেকেই বলেছেন আমাদের সম্মেলনে ৫০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু আমি বলছি সেটা কয়েক কোটি টাকার কাছাকাছি ছিল। সবাই নিজ খরচে এসেছেন, নিজের টাকায় খেয়েছেন, এবং নিজের টাকায় ফিরে গেছেন। এই পুরো ব্যবস্থাপনাই ছিল ব্যক্তিগত অর্থে সম্পাদিত।”
এই প্রসঙ্গে আরও বলেন, “আমি নিজে এই সম্মেলনে এক লাখ টাকা দিয়েছি। আমাদের আমির সাহেবও এক লাখ টাকা দিয়েছেন। এই টাকা কারো কাছ থেকে জোর করে নেওয়া হয়নি। আমি একজন ব্যবসায়ী। আমার নিজের কোম্পানি, ব্রিকস ফিল্ড আছে। আমি নিজের উপার্জন থেকেই দেই। কেউ জোর করে কিছু নেয় না, কেউ চাঁদার ভাগ খায় না।”
ব্যক্তিগত হাদিয়া ও দলীয় চাঁদার মধ্যে ব্যবধান নিয়েও বক্তব্য দেন ফয়জুল করিম। তিনি বলেন, “একজন যদি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ১০ টাকা হাদিয়া দেন, সেটা গ্রহণ করা যায়। কিন্তু সংগঠনের জন্য যেসব অনুদান বা চাঁদা আসে—সেসব আলাদা। সেগুলোর সঙ্গে ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে।”
এই অংশে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দিন তাকে পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, চাঁদার মাধ্যমে সংগঠনের অর্থ যোগাড়ের ধরন কি আপনাদের দলের জন্যও প্রযোজ্য? মুফতির জবাব ছিল বেশ দৃঢ়। তিনি বলেন, “মসজিদে আমরা যখন নামাজ পড়ি, তখন একটা বাক্স সামনে আসে। কেউ কি কখনও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে? মন্দিরে, গির্জায়, প্যাগোডায় অনুদান দেওয়া হয় না? সারা বিশ্বেই তো চ্যারিটি এমনভাবেই চলে।”
রাজনীতিকে তিনি কোন চোখে দেখেন—এই প্রশ্নে ফয়জুল করিম বলেন, তার মূল পরিচয় একজন মুসলমান। ইসলামের আহ্বান ছড়িয়ে দেওয়া, মানুষের কল্যাণে কাজ করা, ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই তার জীবনের মূল মিশন। “আমি একজন দাওয়াতি কর্মী। মুসলমান হিসেবে আমার দায়িত্ব ইসলামের সকল আদর্শ বাস্তবায়ন করা। পরিবারকে সময় দিই, ব্যবসায় সময় দিই, পাশাপাশি ধর্মীয় দাওয়াতি কাজে নির্ধারিত সময় অনুসারে কাজ করি,” বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকারের সমাপ্তিতে তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন যে, ইসলামী আন্দোলন কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি একটি আদর্শভিত্তিক ধর্মীয় আন্দোলন, যার ভিত্তি ইসলাম ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা।
এই সম্পূর্ণ সংলাপ ও ব্যাখ্যা স্পষ্টতই মুফতি ফয়জুল করিমের অবস্থানকে তুলে ধরে— তিনি রাজনীতিকে একটি ধর্মীয় দায়িত্ব মনে করেন এবং তার সংগঠনের অর্থায়ন ও কর্মকাণ্ডেও সেই দায়িত্ববোধের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করেন। জনগণের সামনে হিসাবদিহি করার মধ্যে কোনো লজ্জা নেই বলেই তিনি মনে করেন; বরং স্বচ্ছতার মধ্যেই রয়েছে নৈতিক শক্তি।