প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
গত ৩ জুলাই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোন আলাপচারিতায় অংশ নেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিশেষ মন্তব্যে বলেন, ইরানের তুলনায় রাশিয়ায় তিনি আরও কঠোর। এই ঘোষণাটি একটি সময়ে এসেছে যখন ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং দুই মহাশক্তির সম্পর্ক বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তাপ তৈরি করেছে। এর আগে ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন কূটনৈতিক মেরুকরণ চলছে, কিন্তু এই কথোপকথনটি ছিল তাদের মধ্যে বছরের ষষ্ঠ এবং মাত্র দেড় মাসের মধ্যে চতুর্থ বার যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
টেলিফোনে দুই নেতার দীর্ঘ এক ঘণ্টার আলোচনায় ইউক্রেনের সাম্প্রতিক সংকট, মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি, আমি রাশিয়ায় ইরানের চেয়ে আরও কঠোর নীতি অবলম্বন করেছি। আমরা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে অনেক কথা বলেছি। পুতিন কঠোর এই নিষেধাজ্ঞাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন, কারণ তিনি একজন পেশাদার। তবে তিনি জানেন যে, নতুন নিষেধাজ্ঞাগুলো আসতে পারে, যা রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।”
এই মন্তব্যের সময়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ট্রাম্প-পুতিনের কথোপকথনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মস্কোতে ব্যাপক ড্রোন হামলা চালানো হয়, যা রুশ প্রেসিডেন্সিয়াল প্রশাসনের ওপর সরাসরি আঘাত স্বরূপ। এই হামলা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তোলে এবং দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। বিশ্বমঞ্চে এই ঘটনা ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কঠোর হলেও দ্বিপাক্ষিক সংলাপ অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি নতুন ধারা নির্দেশ করে, যেখানে শক্তি ও কূটনীতির মিশ্রণে মহাশক্তিগুলো নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ট্রাম্পের মতে, পুতিন একজন দক্ষ কূটনীতিক, যিনি নিষেধাজ্ঞার চাপ সামাল দিতে সক্ষম, তবে দীর্ঘমেয়াদে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো রাশিয়ার অর্থনীতি ও সামরিক সক্ষমতায় প্রভাব ফেলবে।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনায় ইউক্রেন সংকটের সমাধান, মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও আগ্রাসন ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। তবে, এই আলোচনাগুলোর মধ্যেও উত্তেজনা ও অবিশ্বাসের সঞ্চার অব্যাহত রয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতিতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হলেও, এই ধরণের উচ্চস্তরের যোগাযোগ দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার আশা সৃষ্টি করেছে। যদিও ড্রোন হামলা, নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক সংঘাতের কারণে পরিস্থিতি খুবই সংকটাপন্ন, তথাপি কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
ট্রাম্প-পুতিন আলাপচারিতা একটি সুস্পষ্ট বার্তা প্রদান করেছে যে, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি কূটনৈতিক যোগাযোগ অপরিহার্য। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় শক্তির দমন ও শান্তির প্রতিষ্ঠার মধ্যে এক সূক্ষ্ম ভারসাম্য রক্ষা করাই বর্তমান কূটনীতির মূল চ্যালেঞ্জ।
ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক কেমন থাকবে, এবং তারা কীভাবে ইউক্রেনসহ অন্যান্য গ্লোবাল সংকটের সমাধান করবে, তা বিশ্ববাসীর দৃষ্টির এককেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে। ট্রাম্পের ‘রাশিয়ায় আরও কঠোর’ মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সূচনা করেছে, যা আগামী দিনে কূটনৈতিক মঞ্চে বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
এই মুহূর্তে বিশ্ববাসী অপেক্ষা করছে দুই মহাশক্তির সংলাপ থেকে বাস্তবিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথ খুঁজে পাওয়ার জন্য, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।