প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৫৮
ডুরিয়ানের গন্ধ আর স্বাদে বিল গেটসের সিঙ্গাপুর সফর: এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা
যখন আপনি বিশ্বের অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির কথা ভাবেন, আপনি হয়তো ভাবেন তাঁর জীবন হবে ব্যস্ত, ঝকঝকে আর অনেকটা সরকারি বা বিলাসবহুল। কিন্তু মে মাসের এক সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের প্রাণকেন্দ্রে নিউটন ফুড সেন্টারে যা ঘটল, তা অনেকের জন্য ছিল এক অবাক করা দৃশ্য। মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস, যিনি প্রযুক্তি দুনিয়ায় যুগান্তকারী, হঠাৎ করেই একেবারে সাধারণ মানুষের মতো সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নিতে হাজির হলেন।
সেদিনের সেই জায়গাটার নাম নিউটন ফুড সেন্টার—একটি বহুল পরিচিত ‘হকার সেন্টার’, যেখানে রাতের আঁধারে মানুষের ভিড় জমে দেশি-বিদেশি নানা স্বাদের খাবারের জন্য। এখানে আপনি পাবেন চিকেন রাইসের ঝোল থেকে শুরু করে ঝাল-মশলাদার সাঁতে, মাংসের ঝোল, কাবাব আর সাগরের মাছের সুপ। বিল গেটস একেবারে ভিড়ের মাঝখানে, ছোট এক দলের সঙ্গে বসে এইসব খাবার চেখে দেখলেন।
তাঁর হাতে ছিল লেবুর শরবত, গরম আবহাওয়ায় একদম সতেজ করার মতো। কাবাবের ছোট ছোট টুকরো, পরোটার গরম গরম খণ্ড, আর ফিশ বল স্যুপের স্বাদ—সবই তিনি চেখে দেখলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিল গেটস মুখে হাসি রেখেই খেতে খেতে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলছেন, কখনো আবার খামখেয়ালিপূর্ণ হাসিও ঝরছে তাঁর মুখে।
তবে যা সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ল, সেটা হলো ডুরিয়ান নামের ঐ ফল। অনেকের কাছে এক অদ্ভুত গন্ধযুক্ত এই ফলের স্বাদ নেওয়ার আগে বহু মানুষই তাকিয়ে থাকেন ‘দূরত্বে’। বাংলাদেশে আমরা ডুরিয়ানকে কাঁঠালের ‘জাতভাই’ বলি, তবে গন্ধ আর টেক্সচারে অনেকটাই আলাদা। বিল গেটস, যার জীবন জুড়ে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির খোঁজ, সেই ফলটিকে চেখে দেখলেন—আর ভিডিওতে দেখা যায়, তাঁর মুখে একটু বিস্ময়, একটু আগ্রহের ছাপ স্পষ্ট।
স্থানীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মতে, বিল গেটস যেন বলছিলেন, “অদ্ভুত গন্ধ সত্ত্বেও স্বাদ যেন অন্যরকম, নতুন এক অভিজ্ঞতা।” তিনি হয়তো শব্দে প্রকাশ না করলেও তাঁর হাসিটা থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, নতুন কিছু চেষ্টা করার এই আগ্রহ।
নিউটন ফুড সেন্টারের এই অভিজ্ঞতা শুধু মাত্র এক খাবারের স্বাদ নেওয়া নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক পরিভ্রমণ। এই সেন্টারের ইতিহাসও রয়েছে বেশ প্রাচীন, ১৯৭১ সালে এর যাত্রা শুরু হয়। ‘ক্রেজি রিচ এশিয়ানস’ সিনেমার পর আন্তর্জাতিক পর্যটকদের মধ্যে এর জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে। গেটসের মতো একজন বিশ্বব্যাপী পরিচিত ব্যক্তি যখন এখানে এসে সাধারণ মানুষের মতো বসে খাচ্ছেন, তখন সেখানকার দোকানিরা আনন্দে আত্মহারা হচ্ছিলেন।
সিঙ্গাপুর সফরের এক ছোট বিরতির মুহূর্তে এই সাধারণ অথচ বিশেষ অভিজ্ঞতা বিল গেটসের জীবনের আরেকটি অধ্যায় হয়ে থাকল। টেকনোলজির জগতের এই আইকন যেন দেখালেন, মানুষের মতো সাধারণ অভিজ্ঞতাও তাঁকে আগ্রহী করে তোলে।
এভাবেই এক সাধারণ সন্ধ্যায় সিঙ্গাপুরের নিউটন ফুড সেন্টারের একটি টেবিলের কোণে বসে বিশ্বকাপিটালিস্ট বিল গেটস নতুন স্বাদের রোমাঞ্চ অনুভব করলেন—ডুরিয়ানের সেই মসলাদার গন্ধ আর স্বাদের মধ্য দিয়ে।