এক সময় ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখেই কেটেছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার ময়দান আলীর দিন। মাঠের কাজ আর কৃষিকাজে জীবন চললেও গ্রামে ছিলেন সম্মানিত গৃহস্থ। চার মেয়ে আর দুই ছেলেকে নিয়ে ছোট সংসার বড় সুখেই কেটেছে। তবে বয়সের ভার আর অসুখের জেরে শেষ জীবনে সেই ময়দান আলী ও তার স্ত্রী জাহেদা বেগম ঠাঁই পেয়েছেন গ্রামের এক জরাজীর্ণ গোয়ালঘরে।
দুর্গাপুর গ্রামের এই বৃদ্ধের দুই ছেলেই আজ সচ্ছল। বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম উপজেলা ভূমি জরিপ কার্যালয়ে চাকরি করেন, আর ছোট ছেলে রবিউল করিম রবি মাছ চাষে স্বাবলম্বী। দু’জনেরই পাকা ঘর আছে, আছে স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন। অথচ এই বৃদ্ধ বাবা-মা তাদেরই আঙিনার গোয়ালঘরে নোংরা, দুর্গন্ধময় পরিবেশে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ময়দান আলী এক কোণে ছালার চৌকিতে শুয়ে আছেন। পাশে রান্নার খড়ি, গবাদি পশুর খাবার আর গন্ধে অস্বস্তিকর পরিবেশ। বৃদ্ধার বিছানা, থালা-বাসন—সবই গাদাগাদি করে রাখা। কথা বলার সময় চোখের পানি আর লুকোতে পারলেন না বৃদ্ধ ময়দান।
ময়দানের স্ত্রী জাহেদা বেগম জানালেন, সংসারের ভরণপোষণ আর জমিজমার আশায় সন্তানেরা সব কাগজ লিখিয়ে নিয়েছে। ছোট ছেলে রবি নাকি ৫ শতাংশ জমি বাড়তি নিয়েছে, সেটি ফিরিয়ে পেতে চান তিনি। মেয়েরা এলেও ভাইদের রোষানলে পড়তে হয় বলে অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধার ভাই মতিউর রহমান। এমনকি সংবাদকর্মীরা কথা বলতে গেলে রবিউল করিম হাতে দেশীয় অস্ত্র ‘দা’ নিয়ে রাগে ফেটে পড়েন।
বড় ছেলে জাহাঙ্গীর অবশ্য দাবি করছেন, তিনি বাবা-মায়ের দেখভাল থেকে বিরত নন। তার ভাষায়, মা-বাবার প্রয়োজনে সব রকম সহায়তাই করে থাকেন, তবে ছোট ভাই বেশি জমি লিখে নেওয়ার পর থেকে তারাই মূলত দেখাশোনা করছে বলে দাবি তার।
এদিকে গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা আফরোজ স্পষ্ট জানিয়েছেন, দেশে অভিভাবক রক্ষণাবেক্ষণ আইন অনুযায়ী সন্তানেরা বাবা-মায়ের যত্ন নিতেই হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
এক সময়ের স্বচ্ছল কৃষক পরিবারের শেষ বয়সে এমন দুর্দশা আর সন্তানদের অবহেলায় গ্রামের মানুষও হতভম্ব। বৃদ্ধ ময়দান আলী আর তার স্ত্রী জাহেদা বেগম এখনো আশায় আছেন—শুধু একটু নিরাপদ ঘর আর সম্মানের জীবন ফিরে পাবেন তারা।