প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন মোড় নিতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চলমান বিচারিক কার্যক্রম। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত কথিত ‘জুলাই গণহত্যা’ নিয়ে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আগামী ১০ জুলাই ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
আজ ৭ জুলাই সোমবার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ এই বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। আদালতে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শুনানি করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুন এই মামলায় পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আমলে নেওয়া হয় এবং একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন শেখ হাসিনা। এই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে তদন্ত সংস্থা তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করে।
ট্রাইব্যুনাল ১৬ জুন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এক সপ্তাহের মধ্যে হাজির হতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু আদালতে তাদের কেউই উপস্থিত হননি। ফলে ট্রাইব্যুনাল ১৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণের নির্দেশ জারি করে এবং জানিয়ে দেয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচার কার্যক্রম চলবে। বিজ্ঞপ্তি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে এটি কার্যকর করা হয়।
এরপর ২৪ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়। মামলার আরেক আসামি, সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজির ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি সম্পন্ন হয়। এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র পড়ে শোনানো হয় ১ জুন, যেখানে প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেন। পুরো শুনানি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়।
এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে গত ১২ মে, যেখানে বলা হয়, জুলাই মাসের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ নির্দেশনা এসেছিল শেখ হাসিনার দিক থেকে। তদন্ত দল আরও জানায়, এই হত্যাযজ্ঞ ছিল পরিকল্পিত এবং ক্ষমতাসীন সরকারের জ্ঞাতসারে সংঘটিত, যার নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন সরকারপ্রধান।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল দুইটি মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জন নেতার বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম দুই মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় তদন্ত শেষে আদালতে আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে চলমান বিচার প্রক্রিয়া এখন এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
এ মামলার পেছনে যে আন্দোলন তার সূত্রপাত ঘটে ২০২৪ সালের মাঝামাঝিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। আন্দোলনটি ধীরে ধীরে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়লে সরকার তা দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। অভিযোগ রয়েছে, এসময় নির্বিচারে গুলি ও হত্যার মাধ্যমে প্রায় দেড় হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়। আন্দোলন দমন এবং গণহত্যার অভিযোগে দায়ীদের বিচারের জন্যই এই মামলার সূচনা।
ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যথাযথভাবে প্রমাণিত হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চলবে এবং প্রয়োজনে সাজাও ঘোষণা করা হবে। আগামী ১০ জুলাই এই মামলার ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে—অভিযোগ গঠন হবে কি না, সে সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রয়েছে পুরো জাতি ও আন্তর্জাতিক মহল।