প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার টাঙ্গুয়ার হাওরে উচ্চস্বরে গান-বাজনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসন। পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার লক্ষ্যে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত সোমবার (৯ জুন) নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম। বিষয়টি তিনি তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করে সাধারণ জনগণকে অবহিত করেন।
ইউএনও মো. আবুল হাসেম জানান, হাওরে যারা ভ্রমণে এসে উচ্চস্বরে মাইক বাজিয়ে গান বা অন্যান্য সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে শব্দদূষণ ঘটাবে, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত টাঙ্গুয়ার হাওরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং পর্যটনের নামে উদ্ভূত নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
বিশিষ্ট গবেষক ও পরিবেশবাদী পাভেল পার্থ বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর শুধু একটি ভ্রমণ স্থান নয়, এটি বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক জলাভূমি, যা রামসার সাইট হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রাপ্ত। এখানে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা আমাদের একান্ত দায়িত্ব।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে যেভাবে হাউজবোট চলাচল করছে, উচ্চ শব্দে গান বাজানো হচ্ছে এবং প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলানো হচ্ছে, তাতে হাওরের পরিবেশ চরম হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এই প্রবণতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও স্থানীয় প্রতিবেশ উভয়ই নষ্ট হয়ে যাবে।”
প্রসঙ্গত, টাঙ্গুয়ার হাওর একটি সংরক্ষিত জলাভূমি এবং দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক বছরে পর্যটকদের অনিয়ন্ত্রিত চলাচল, নিয়মবহির্ভূত হাউজবোট ব্যবহারে হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক পর্যটক হাওরে আসেন সাউন্ড সিস্টেমসহ মাইক, ডিজে এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি নিয়ে, যা শুধুমাত্র শব্দদূষণই সৃষ্টি করে না, বরং হাওরের পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর জীবনযাত্রা ব্যাহত করে।
এমন পরিস্থিতিতে তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞাকে বিশেষজ্ঞ মহল ও পরিবেশবাদীরা সময়োপযোগী এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর মনিটরিং ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।