প্রকাশ: ১২ জুন, ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ময়মনসিংহ রেলওয়ের বিভিন্ন স্টেশনে ঢাকামুখী যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না পেয়ে শত শত মানুষ বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছেন। এমনকি নারীদের পাশাপাশি শিশুরাও মই বেয়ে ছাদে উঠে গন্তব্যের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। এ চিত্র ময়মনসিংহ অঞ্চলজুড়ে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গৌরীপুর জংশন স্টেশনে দেখা যায়, শত শত যাত্রী মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মে ভিড় করছেন। ট্রেন আসামাত্র একপ্রকার হুড়োহুড়ি করে কেউ ঢোকার চেষ্টা করছেন বগির ভেতর, কেউবা মই বা জানালার ধারে হাত-পা গলিয়ে উঠে যাচ্ছেন ছাদে। এ সময় উপস্থিত রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা বারবার মাইকিং করে ছাদে উঠতে নিষেধ করলেও যাত্রীরা কোনো নির্দেশ মানছেন না। বরং জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গন্তব্যে পৌঁছাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে গৌরীপুর জিআরপি ফাঁড়ির পুলিশ জানায়, তারা নিয়মিতভাবে যাত্রীদের সতর্ক করছেন এবং ছাদ ভ্রমণ পরিহার করতে মাইকিং করছেন। তবে ঈদের ছুটির পর ঢাকামুখী মানুষের ভিড় এতটাই বেশি যে, বিপজ্জনক এই যাত্রা ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রেলপথের নিরাপত্তা রক্ষাকারী সদস্যরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে তা অনেকক্ষেত্রেই ব্যর্থ হচ্ছে।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে ঢাকামুখী যাত্রীদের স্রোত সামাল দিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকাগামী কমিউটার, সকাল ৯টায় দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকাগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, সকাল সাড়ে ১০টায় মোহনগঞ্জ-ঢাকাগামী হাওড় এক্সপ্রেস, এবং দুপুর দেড়টায় জারিয়া-ঢাকাগামী বলাকা কমিউটার ট্রেন ময়মনসিংহ স্টেশন ছেড়ে গেছে। প্রত্যেকটি ট্রেনই যাত্রীতে পরিপূর্ণ ছিল। এমনকি দাঁড়িয়ে থাকারও জায়গা ছিল না অনেক বগিতে। অনেকেই জানালার ফাঁক দিয়ে বা দরজা বেয়ে উঠে গেছেন ছাদে। ঢাকাগামী প্রতিটি ট্রেনেই মানুষ একে অপরের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে, কেউবা ছাদে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাত্রা করছেন।
স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা জানান, ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কিছুটা বিলম্বে আসছে। ফলে দীর্ঘক্ষণ প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। তারা বলেন, সিট না পাওয়ায় কেউ কেউ ছাদে উঠছেন, কেউবা হেলেঞ্চা করে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যের দিকে। ঢাকা ফিরে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে হবে, এই চাপে পড়েই অনেকেই ঝুঁকি নিচ্ছেন বলে জানান তারা।
এই পরিস্থিতিতে রেল কর্তৃপক্ষ চরম চাপের মধ্যে পড়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও রেলওয়ে পুলিশ সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তবে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে তাদের ব্যবস্থাপনা অনেকক্ষেত্রে ভেঙে পড়ছে। যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে, আর প্রশাসনের পক্ষে তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক খানের বক্তব্য জানার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
সবমিলিয়ে ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরার এই সময়টিতে রেলভবনে চরম বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের বারবার সতর্কতা উপেক্ষা করে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছাদে উঠছেন, যা দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে তুলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রেলওয়ের পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলা সহজ হয়।