প্রকাশ: ২রা জুলাই, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে বিবেচিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ দিবস এবার থেকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে এবং এ দিন সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার (২ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ হাসানের স্বাক্ষরে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ৫ আগস্ট দিনটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস পালন সংক্রান্ত সরকারি ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবসের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দিবসটি শুধু স্মরণীয় দিন হিসেবেই নয়, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পালিত হবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে এবং এরই ধারাবাহিকতায় সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও প্রশাসনিক ইউনিটে যথাযথ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। উপজেলা পরিষদসহ জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনকে এ নির্দেশনা অনুসারে কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অবহিত করা হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ নামটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল গণমানুষের অধিকার, ভোটের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক মুক্তি ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলতার প্রশ্নে। এটি ছিল এক প্রতীকী এবং বাস্তব প্রতিরোধ, যা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার গতিপথে এক ঐতিহাসিক বাঁক রচনা করে।
নতুন প্রজন্মের অনেকেই হয়তো এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বা প্রাসঙ্গিকতা সম্যকভাবে জানেন না, তবে সরকারিভাবে দিবসটি পালনের মাধ্যমে এই ইতিহাস তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হলো। সরকার আশা করছে, এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ ও লালন করা যাবে, সেই সঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মনোভাব তৈরি হবে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে।
রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণার ফলে দিনটিতে সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি ও অপরিহার্য সেবামূলক সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আলাদা নির্দেশনা জারি করা হবে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, দেরিতে হলেও এই দিবসের স্বীকৃতি গণতন্ত্রকামী মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন। অন্যদিকে বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘোষণা রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ববোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।
৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। আয়োজিত হবে আলোচনা সভা, স্মরণসভা, প্রদর্শনী এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন। স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমেও দিবসটির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা গেছে।
সরকারের এই ঘোষণায় ৫ আগস্ট এখন থেকে শুধুই একটি তারিখ নয়, বরং হয়ে উঠবে ইতিহাস ও সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মনে করিয়ে দেবে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য এই দেশের মানুষ কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।