প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
এক সময়ের প্রচলিত ধারণা ছিল—বেশি ডিম খাওয়া মানেই হৃদ্রোগ, উচ্চ কোলেস্টেরল বা রক্তচাপের ঝুঁকি। ‘ডিম খেলে রক্ত ঘন হয়’, ‘চর্বি জমে’, কিংবা ‘স্যালমোনেলার ঝুঁকি’—এসব ভুল তথ্য আমাদের খাদ্যাভ্যাসকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে, যে স্বাস্থ্যকর খাবারটি বহু মানুষের খাদ্যতালিকা থেকেই অনেকাংশে বাদ পড়ে যায়। অথচ আধুনিক চিকিৎসা ও পুষ্টিবিজ্ঞান আজ এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা, বিশেষত চীনে পরিচালিত এক বৃহৎ সমীক্ষা, দেখিয়েছে প্রতিদিন একটি ডিম খাওয়ার কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই, বরং তা শরীরের জন্য উপকারী।
একটি প্রমাণ সাইজের ডিমে প্রায় ৪.৬ গ্রাম চর্বি থাকে, যার মধ্যে মাত্র এক-চতুর্থাংশ স্যাচুরেটেড ফ্যাট—যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর ভাবা হয়ে থাকে। তবে যদি কারও আগে থেকেই কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ বা ফ্যাটি লিভারের সমস্যা না থাকে, তাহলে এই পরিমাণ চর্বি মানবদেহের জন্য কোনো ভাবেই হুমকি নয়। বরং এতে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন এ, ডি, বি ও বি১২, লুটেইন ও জিয়াস্যানথিন শরীর ও চোখের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণ এনে দেয়।
তবে ডিম খাওয়ার পদ্ধতিতেও সচেতনতা প্রয়োজন। সবচেয়ে স্বাস্থ্যসম্মত উপায় হলো সেদ্ধ করে খাওয়া বা পানিতে পোচ করা। ভাজা ডিম যতটা স্বাদযুক্ত, ঠিক ততটাই অস্বাস্থ্যকর হতে পারে যদি তা অতিরিক্ত তেল বা মাখনে তৈরি হয়। এতে অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
কাঁচা ডিম বা আধা সিদ্ধ ডিমও খাওয়া যায়, তবে তা হতে হবে স্যালমোনেলা-নিরাপদ। সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে ভালোভাবে সিদ্ধ করাই শ্রেয়। ডিম কেনার সময়ও সতর্ক থাকা দরকার—ফাটা বা চিড় ধরেছে এমন ডিম কখনোই খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে জীবাণু ঢুকে যেতে পারে। ফ্রিজে রাখার সময় ডিম রাখার নির্দিষ্ট বক্স ব্যবহার করা সবচেয়ে নিরাপদ। এতে করে ডিমের সাদা অংশ তিন সপ্তাহ এবং হিমায়িত অবস্থায় সাদা ও কুসুম তিন মাস পর্যন্ত ভালো থাকে।
যদিও ডিম একটি চমৎকার প্রোটিন উৎস, তবুও মাত্রাতিরিক্ত ডিম খাওয়া শরীরের জন্য সুফল বয়ে আনে না, যদি না আমাদের শরীর তার জন্য প্রস্তুত থাকে। অনেক সময় অন্য খাবার থেকেও আমরা এত বেশি প্রোটিন পাই যে তা দৈনিক চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়, যা দেহের জন্য উপকারী নয় বরং ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ডিম আমাদের খাদ্যতালিকায় রাখার সময় প্রয়োজন জ্ঞান ও পরিমিতিবোধ। দৈনিক একটি ডিম খাওয়া শরীরের জন্য উপকারী এবং তা হৃদ্যন্ত্রের জন্য ঝুঁকির কারণ নয়—এটা নিশ্চিত করেছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা। তবে প্রতিটি খাদ্যাভ্যাসের মতো, এখানে চাবিকাঠি হচ্ছে পরিমিতি এবং নিরাপদ প্রস্তুত প্রক্রিয়া। আজকের বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি বলছে—ডিম, যদি ঠিকভাবে খাওয়া হয়, তা শরীরের এক পরিপূর্ণ পুষ্টির উৎস হয়ে উঠতে পারে।