প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫। নিজস্ব সংবাদদাতা। একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তরের বরিশাল ব্যুরো প্রধান আকতার ফারুক শাহিনের নামে একটি মামলা দায়ের করায় স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিএনপির সাবেক সাংসদ বিলকিস জাহান শিরিন ৩ জুলাই বরিশালের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোতোয়ালি আমলী আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ তুলে মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, ফারুক শাহিনের এক সংবাদ প্রকাশের কারণে তার ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বরিশালের সাংবাদিক সমাজের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক সংগঠনসমূহ এবং মিডিয়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন একযোগে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও পেশাগত মর্যাদার প্রতি এই হামলাকে দৃষ্টান্তহীন ও অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম খসরু ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকিরসহ অন্যান্য নেতারা দ্রুত এই মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এবং সাংবাদিকদের উপর চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বরিশাল মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহম্মেদ আবু জাফর, বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি অনিসুর রহমান স্বপন, সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, বরিশাল সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি নিকুঞ্জ বালা পলাশ ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন হাসান, ন্যাশনাল ডেইলিজ ব্যুরো চিফ অ্যাসোসিয়েশন (এনডিবিএ) বরিশালের সভাপতি পুলক চ্যাটার্জি, বরিশাল টেলিভিশন মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি হুমায়ুন কবির, বরিশাল ইলেকট্রনিকস মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিমজা) সভাপতি মুরাদ আহম্মেদ সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ একাধিক বিবৃতিতে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, সংবাদ প্রকাশের জন্য কোনো সাংবাদিকের উপর ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক আঘাত আনা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের মামলা সাংবাদিকতা করাকে বন্ধ করে দিতে বা বাধা দিতে চেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হবে।
তারা আরও উল্লেখ করেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের মেরুদণ্ড, যা সুরক্ষিত না হলে দেশের সত্য প্রকাশ ও জনস্বার্থের সঠিক পরিবেশন সম্ভব হবে না। সাংবাদিকরা জনগণের চোখ, কান ও মুখ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, আর এজন্য তাদের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করতে হবে। তাই এই মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের মাধ্যমে বরিশালের সাংবাদিক সমাজের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা উচিত।
বরিশালের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা রক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করেছে। তারা এ ঘটনা নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, গণমাধ্যমের ওপর এই ধরনের চাপ ও মামলা ন্যায়বিচারের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে এবং সামগ্রিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বর্তমানে দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করে চলেছেন। তাই তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার ঐতিহ্য অটুট রাখতেই সংবাদ প্রকাশের নামে মামলা দায়েরের প্রতিবাদ সবসময় তীব্র থাকবে বলে একত্রিত সংবাদ সম্মেলন ও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যেই স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন সমন্বিতভাবে এই মামলার অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অযথা মামলা বন্ধে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এই ঘটনা দেশের গণতন্ত্র ও সাংবাদিকতাকে আরো মজবুত করার পথ বন্ধ করতে পারে না বলে তারা আশাবাদী।