প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ডেইলি স্টার ভবনে অনুষ্ঠিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রতিবেদন পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা একসময় ছিল সম্পূর্ণ সরকার নিয়ন্ত্রিত, অথচ বর্তমানে একটি স্বাধীন ও ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়ে কাজ করছে।
প্রেস সচিব স্পষ্ট করে বলেন, সদ্য বাতিল হওয়া সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিল করে যে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার জন্য নয়। বরং এ আইন সংবাদকর্মীদের অধিকার রক্ষায় সহায়ক হবে। শফিকুল আলম জানান, সরকার এখন এমন একটি পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট, যেখানে কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কিংবা প্রশাসনের কেউ সাংবাদিকদের ফোনে হুমকি দেবে না। ভুল হলে তা সংশোধনের সুযোগ থাকবে, কিন্তু গুম কিংবা ভয় দেখানোর সংস্কৃতি চিরতরে পরিহার করার দিকেই এগোচ্ছে দেশ।
তবে তিনি সতর্ক করেন, প্রেস ফ্রিডম মানে মিথ্যা বলার কিংবা গুজব ছড়ানোর স্বাধীনতা নয়। যারা মিথ্যা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য ছড়ায়, তাদের জন্য গণমাধ্যমে স্থান থাকা উচিত নয় বলে মত দেন তিনি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি দায়বদ্ধতার বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্ব পেতে হবে।
সাবেক সরকার আমলে সাংবাদিকদের ওপর যে নির্যাতন ও নিপীড়ন হয়েছে, তা স্বীকার করে শফিকুল আলম বলেন, গত ১৫ বছরে যারা নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, তাদের প্রতিবাদের অধিকার আছে এবং তাদের কণ্ঠস্বর শোনা উচিত। এ ব্যাপারে জাতিসংঘকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ওই সময়কার সাংবাদিকতা ও পরিস্থিতি নিরীক্ষা করা হয়।
তিনি সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতনের বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে জটিলতা দূর করতে বিকল্প উপায় অনুসন্ধানের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার চায় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ন্যায্য বেতন নিশ্চিত করুক। পাশাপাশি প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া নীতিমালা থাকা জরুরি বলে তিনি মত দেন। তিনি মনে করেন, এই নীতিমালাগুলো গণমাধ্যমের পেশাদারিত্ব, গ্রহণযোগ্যতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।
অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য ফাহিম আহমেদ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, কমিশনের যেসব সুপারিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্তত কিছু অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করা উচিত। পাশাপাশি তিনি জানান, গণমাধ্যমে পেশাগত নিরাপত্তা, তথ্যের সুরক্ষা ও স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য একটা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি।
কমিশনের আরেক সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, একটি সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হলে গণমাধ্যমকে বাদ দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। তিনি মনে করেন, এই মুহূর্তে গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনর্গঠন করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
সেমিনারে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক নেতারা একমত হন যে, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুসংগঠিত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান ভিত্তি। এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা ও দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের সম্মিলিত প্রয়াসেই কেবল একটি টেকসই ও ন্যায়ভিত্তিক তথ্যব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।