প্রকাশ: ৩০শে জুন ২০২৫ । নিজস্ব প্রতিবেদক
একটি বাংলাদেশ অনলাইন
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে আবারও বড় ধরনের মূল্যহ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা কমে আসা এবং ওপেকভুক্ত দেশগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা—এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ একত্রে কাজ করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এর প্রেক্ষিতে সোমবার (৩০ জুন) দিনের শুরুতেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ হারে পড়ে যায়, যা বাজার বিশ্লেষকদের কাছে একটি প্রত্যাশিত ধাক্কা হিসেবেই ধরা হচ্ছে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে ব্রেন্ট ক্রুডের দামে। আগস্ট মাসের জন্য এটির মূল্য ব্যারেলপ্রতি ৬৬ সেন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬৭ দশমিক ১১ ডলারে। এর চেয়ে আরও বেশি পতন হয়েছে সেপ্টেম্বরের জন্য নির্ধারিত দামে, যেখানে প্রতি ব্যারেল তেলের দাম নেমে এসেছে ৬৫ দশমিক ৯৭ ডলারে— যা আগের তুলনায় ৮৩ সেন্ট কম। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তেলবাজারে ব্যবহৃত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দামও কমেছে ৯৪ সেন্ট বা ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যার ফলে বর্তমানে প্রতি ব্যারেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৫৮ ডলারে।
বিশ্ববাজারে এই মূল্যহ্রাস এমন এক সময় ঘটেছে, যখন কিছুদিন আগেই ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা এবং সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি জ্বালানি বাজারকে অস্থির করে তুলেছিল। যুদ্ধের আশঙ্কায় মূল্য বেড়ে গিয়েছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলার পর্যন্ত। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে এবং যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পরপরই বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে এবং তেলের দাম আবারো নিম্নমুখী হতে থাকে। আইজি মার্কেটসের বিশ্লেষক টনি সাইকামোর এ প্রসঙ্গে বলেন, “ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ফলে বাজারে আতঙ্কজনিত মূল্যবৃদ্ধির যে প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই তেলের বাজার চাপের মুখে পড়েছে।”
অন্যদিকে ওপেক ও তার মিত্র দেশগুলোর (ওপেক প্লাস) জোটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগস্ট মাসে তারা প্রতিদিন অতিরিক্ত ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই হারে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে, এবং এই প্রবণতা চলমান থাকবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আগামী ৬ জুলাই ওপেকের সদস্য রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে, যেখানে এই উৎপাদন বৃদ্ধির পঞ্চম দফা সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
এছাড়া তেল উৎপাদনের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এক তথ্য দিয়েছে খনিজ খাত গবেষণা সংস্থা বেকার হিউজ। সংস্থাটি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা আরও ছয়টি কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩২টিতে, যা অক্টোবর ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, দেশটিতে উৎপাদনগত দিক থেকে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখতে ওপেক প্লাস দেশগুলো বড় ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক রাজনীতি এবং ওপেকের উৎপাদন কৌশলের সমন্বয় বিশ্ববাজারে তেলের দামের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলবে। এছাড়া চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোর শিল্প কার্যক্রম ও চাহিদা বৃদ্ধির প্রবণতাও বাজারকে দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত বাজার পরিস্থিতি বলছে, সংকটকবলিত অঞ্চলে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির অব্যাহত থাকা এবং ওপেকের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় তেলের দাম কিছুটা নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখবে।
বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জ্বালানি তেলের দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠছে। এমন প্রেক্ষাপটে এই দরপতন অনেক দেশের জন্য স্বস্তির বার্তা হলেও, উৎপাদননির্ভর অর্থনীতিগুলোর জন্য এটি কিছুটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা দিচ্ছে।