সর্বশেষ :
যুক্তরাষ্ট্রে ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল বিল’ কার্যকর: স্বাধীনতা দিবসেই ট্রাম্পের সই, বিতর্কে উত্তাল দেশ গাজায় রক্তস্রোত: ৪৮ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৩০০-র বেশি ফিলিস্তিনি, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ছে মানবতা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে র‍্যাগিং কাণ্ড: নবীন নির্যাতনে ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত, তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গণরোষের মুখে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর: আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ঘটনা রাজনৈতিক পরিচয়ের দাপট: বনানীতে যুবদল নেতার ক্ষমতার অপব্যবহার ও হোটেল-বারে সন্ত্রাসী হামলার সম্পূর্ণ চিত্র উন্মোচিত দেশমাতৃকার মুক্তি ও বিভীষিকাময় অধ্যায়ের অবসান: ইতিহাসের মোড় ঘোরানো এক সাহসী সৈনিকের মুক্তি আড়াইহাজারে যৌথবাহিনীর অভিযান: ইয়াবাসহ দুই নারী গ্রেপ্তার, পলাতক চিহ্নিত ডিলার তাসকিন-তানজিমের গতি ঝড়ে কুপোকাত লংকান ব্যাটিং লাইনআপ ঋতুপর্ণার দুর্দান্ত গোলে এগিয়ে বাংলাদেশ: মিয়ানমারের মাটিতে লাল-সবুজের দৃঢ় প্রতিরোধ শ্যামনগরে রহস্যজনক অজ্ঞান পার্টির হানা: দুই বাড়িতে চুরি, হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন

নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে বিপ্লবের সুর: ট্রাম্পের কটাক্ষের জবাবে মামদানি বললেন—”এই শহরে কোটিপতির প্রয়োজন নেই”

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৩০ জুন, ২০২৫
  • ২৬ বার

প্রকাশ: ৩০শে জুন, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

নিউ ইয়র্ক শহরের আসন্ন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী জোহরান মামদানি এক নতুন রাজনীতির ধারা গড়ে তুলেছেন। অভিবাসী পরিবারের সন্তান এই তরুণ প্রগতিশীল নেতা তার বক্তব্যে, নীতিতে এবং নির্বাচনী প্রচারে এমন কিছু বার্তা দিচ্ছেন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তার সাম্প্রতিক বক্তব্য—”এই দেশে কোটিপতির প্রয়োজন নেই”—তাৎক্ষণিকভাবে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছে।

এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং মামদানিকে “কমিউনিস্ট পাগল” বলে কটাক্ষ করেন। ট্রাম্প বলেন, “আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে নিউ ইয়র্ক শহরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এমন এক ব্যক্তির হাতে যেতে পারে যে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর বিরুদ্ধে কাজ করছে। যদি এই লোকটি মেয়র হন, নিউ ইয়র্ক কমিউনিস্ট শহরে পরিণত হবে।”

রবিবার এনবিসির জনপ্রিয় টক শো “Meet the Press”-এ সাক্ষাৎকার দিতে এসে মামদানি বলেন, “আমি মনে করি না আমাদের সমাজে কোটিপতির প্রয়োজন আছে, বিশেষ করে যখন দেশের বড় একটা অংশ দরিদ্রতা, বৈষম্য এবং সামাজিক নিপীড়নের শিকার। একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও ন্যায্য সমাজ গড়ে তুলতে গেলে আমাদের কর কাঠামো ও সম্পদ বণ্টনের ব্যাপারে মৌলিক পরিবর্তন আনতে হবে।”

জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলির সদস্য এবং নিজেকে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পরিচয় দেন। তার রাজনৈতিক বিশ্বাস, অর্থনীতি ও সমাজে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার উপর গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি শহর তৈরি করতে চাই যেখানে শুধু ধনী নয়, গরিব, মধ্যবিত্ত, অভিবাসী, শ্রমজীবী সবাই সমান সুযোগ পাবে। সেই সমাজ গড়তে গেলে আমাদের ধনীদের একটু বেশি অবদান রাখতে হবে।”

মামদানি একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন, যাতে বছরে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করা নিউ ইয়র্কবাসীদের উপর অতিরিক্ত ২% কর আরোপ করা হয়। তার মতে, “এই অতিরিক্ত কর থেকেই শহরের স্কুল, হাসপাতাল, পরিবহন ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী বাসস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে। এতে শুধু গরিব না, ধনী শ্রেণিও উপকৃত হবে কারণ শহরটি সকলের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।”

তবে তার এই বক্তব্য ডানপন্থী রাজনীতিকদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ফক্স নিউজ-এ ট্রাম্প বলেন, “তাকে যদি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, তাহলে আমি প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করবো যেন সে কোন অর্থ না পায় যতক্ষণ না সে আমাদের মতবাদ অনুযায়ী কাজ করে।” এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মামদানি বলেন, “এই ধরনের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। আমি গর্বিত যে আমি এমন একটি রাজনীতি করছি যেখানে জনগণের অধিকার, মর্যাদা এবং ভবিষ্যতের প্রশ্ন প্রাধান্য পাচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প আমার গায়ের রঙ, নাম, সুর এবং আত্মপরিচয়কে আক্রমণ করছেন কারণ তিনি জানেন আমি এমন একটি পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করছি যা তার মত ধনী-অনুগত রাজনীতিকদের জন্য হুমকি। তিনি আমার মত সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি, শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বরকে ভয় পান।”

নিউ ইয়র্ক শহরের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস মামদানির জনপ্রিয়তা দেখে মন্তব্য করেন, “তিনি রূপার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন, তার নখ ম্যানিকিউর করা।” এই মন্তব্যকেও অনেকেই শ্রেণিবৈষম্যমূলক ও বৈষম্যমূলক ব্যঙ্গ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি নিজে একটি দক্ষিণ এশীয় মুসলিম অভিবাসী পরিবারের সন্তান এবং তার রাজনীতি গড়ে উঠেছে অভিবাসী ও প্রান্তিক জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।

প্রাথমিকভাবে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে মামদানি অ্যান্ড্রু কুওমোকে পরাজিত করে বড় ধরনের চমক সৃষ্টি করেছেন। এটি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেককে অবাক করেছে এবং অনেকেই বলছেন, নিউ ইয়র্কের রাজনীতিতে এখন প্রগতিশীলদের পালা।

বর্তমানে ধারণা করা হচ্ছে, মামদানি, অ্যাডামস এবং রিপাবলিকান কার্টিস স্লিওয়ার মধ্যে মেয়র পদের জন্য তিনমুখী লড়াই হবে। তবে কুওমো ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনিও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

নিউ ইয়র্ক শহরের এই নির্বাচনের গুরুত্ব শুধু স্থানীয় রাজনীতি নয়, গোটা আমেরিকার ভবিষ্যত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও তাৎপর্যপূর্ণ। মামদানি যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করছেন—ধন-সম্পদের কেন্দ্রীভবন, সামাজিক বৈষম্য, কর ন্যায্যতা—তা এখন আমেরিকার বহু নাগরিকের মনের কথা হয়ে উঠছে।

শেষ পর্যন্ত, মামদানি শুধু একজন রাজনৈতিক প্রার্থী নয়, বরং এক নতুন চিন্তাধারার প্রতীক, যার নেতৃত্বে নিউ ইয়র্কের মতো একটি প্রভাবশালী শহর তার সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে পারে। সময়ই বলে দেবে, এই বিপ্লবী বার্তা কতটা দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সক্ষম হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া