প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
মার্কিন রাজনীতির সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বিতর্কিত ও বহুল আলোচিত আইন ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল বিল’ অবশেষে কার্যকর হতে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ৫টায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিলটিতে স্বাক্ষর করবেন—যার মধ্য দিয়ে এটি আইনে পরিণত হবে। আর তা ঘটছে এমন এক দিনে, যেটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক—স্বাধীনতা দিবস।
৯০০ পাতার এই ব্যাপক আইনি নথিটি গত সপ্তাহেই সিনেটের বাধা অতিক্রম করে। বৃহস্পতিবার এটি শেষবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে উত্থাপিত হয় এবং মাত্র চার ভোটের ব্যবধানে তা পাস হয়। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ২১৮টি, বিপক্ষে পড়ে ২১৪টি। এতে একদিকে যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের পথ সুগম হলো, তেমনি অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উদ্বেগ, বিতর্ক এবং সমালোচনার নতুন ঢেউও বইছে।
এই বিলের মূল কাঠামোতে রয়েছে কর সংস্কার, প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কঠোর অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা। বিলটি কার্যকর হলে সীমান্ত নিরাপত্তায় নজিরবিহীন পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে, যা মূলত অবৈধ অভিবাসীদের হটাতে ব্যবহৃত হবে। এ ছাড়া বিলটিতে স্বল্প আয়ের মানুষ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ফেডারেল স্বাস্থ্যসেবা খাতে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রস্তাব রয়েছে। এই বিষয়গুলোই ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর ও বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এ বিলকে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো একটি আইন হিসেবে দেখছেন। বৃহস্পতিবার হাউসে ভোট পাসের পর তিনি ঘোষণা দেন, “আমি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিলে সই করতে যাচ্ছি। এটি আমেরিকাকে রকেট গতির উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে। এটি একটি দারুণ ব্যাপার।”
হোয়াইট হাউসের তরফ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, প্রেসিডেন্টের দপ্তরে বিলটি ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে এবং শুক্রবার ভোরে তিনি তাতে সই করবেন।
তবে এ আইনের সমালোচনার ঝড়ও থেমে নেই। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বাজেট ছাঁটাই এবং অভিবাসন নীতির কঠোরতায় এ বিলকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং এমনকি রিপাবলিকানদের ভেতরের কিছু সদস্যও। বিলটির বিরুদ্ধে এককভাবে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম ইলন মাস্ক। এক সময় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই ধনকুবের এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান ধ্বংস করে দেবে। এটি নিছক এক উন্মাদনা, যা রিপাবলিকান পার্টির রাজনৈতিক আত্মহত্যা ডেকে আনবে।”
মাস্কের এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, বিলটির প্রভাব শুধু অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি বা অভিবাসন নীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থান, বাণিজ্যনীতি এবং মানবাধিকার ভাবমূর্তিতেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বিলটির নামকরণ করেছেন ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল’। একাধিক ভাষণে তিনি বারবার উল্লেখ করেছেন, এই বিলই হবে তার প্রশাসনের সবচেয়ে ‘বৃহৎ ও গর্বের’ অর্জন। ট্রাম্পের ভাষায়, “এটি এমন একটি আইন, যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী, আরও সুরক্ষিত এবং আরও উন্নত করবে।”
তবে তীব্র মতবিরোধ ও পারস্পরিক দোষারোপের মধ্যে দিয়ে বিলটি পাস হলেও, বাস্তবায়নের পর তার প্রতিক্রিয়া কতটা ইতিবাচক হবে—তা এখনই বলা কঠিন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বহু বিতর্কিত আইন পাস হয়েছে, কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া কখনো কখনো প্রশাসনের কফিনে শেষ পেরেকও ঠুকে দিয়েছে। ‘বিগ অ্যান্ড বিউটিফুল বিল’-এর ক্ষেত্রেও অনেকে এমনটাই আশঙ্কা করছেন।
তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে এখন এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে, যেখানে “বিউটিফুল” শব্দের অর্থ একেক পক্ষের কাছে একেক রকম—কাউকে দেয় প্রতিশ্রুত উন্নতির স্বপ্ন, আবার কাউকে শঙ্কিত করে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।