প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সহিংসতা ফের ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি নাইজারের পশ্চিম সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সশস্ত্র জিহাদিদের সঙ্গে নাইজার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৫১ জন। নিহতদের মধ্যে ১০ জন নাইজার সেনা এবং ৪১ জন সন্দেহভাজন জিহাদি সদস্য। আহত হয়েছে আরও অন্তত ১৫ জন সেনা। এই ঘটনায় গোটা অঞ্চলজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে নাইজারের গোথেয় বিভাগের বোলাউন্ডজৌঙ্গা ও সামিরা এলাকায়, যা বুরকিনা ফাসো ও মালি সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই সশস্ত্র জিহাদি হামলার জন্য কুখ্যাত। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, কয়েক শত জিহাদি একযোগে দুই এলাকায় হামলা চালায়। তাদের মোকাবেলায় পাল্টা অভিযান চালায় নাইজারের সেনাবাহিনী।
নাইজারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল সালিফু মোদি এক সরকারি বিবৃতিতে জানান, “এই পরিকল্পিত ও সমন্বিত হামলায় আমাদের ১০ জন সৈন্য শহীদ হয়েছেন এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী দৃঢ়তার সঙ্গে জবাব দিয়েছে। আমরা ৪১ জন হামলাকারীকে নিশ্চিহ্ন করতে সক্ষম হয়েছি।”
জাতীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত সেই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, হামলার পরপরই ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানের গতি আরও বাড়ানো হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য যে, নাইজার বর্তমানে একটি সামরিক জান্তার অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। গত এক দশক ধরে দেশটি আল-কায়েদা ও ইসলামিক স্টেট সংশ্লিষ্ট জিহাদি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এই সংঘর্ষ শুধু নাইজারে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি গোটা সাহেল অঞ্চলজুড়েই ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে প্রতিবেশী মালি, বুরকিনা ফাসোসহ একাধিক রাষ্ট্র একই ধরনের জঙ্গি হুমকির মুখে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক এই হামলা আবারও প্রমাণ করে যে, পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি কতটা নাজুক এবং বহিরাগত সহায়তা ছাড়াই সামরিক জান্তাগুলোর পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। ফ্রান্স এবং পশ্চিমা শক্তিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে সাহেল অঞ্চল থেকে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনায় এই ধরনের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও হামলার ভয়াবহতার কথা জানিয়েছেন। তারা বলেন, বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে গোটা এলাকা প্রকম্পিত হয়। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে পালিয়ে যায়, অনেকেই এখনো নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রয়েছে।
জিহাদিদের এই সমন্বিত হামলার পর নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, সাহেল অঞ্চলে এ ধরনের হামলা আরও বাড়তে পারে। শুধু সামরিক শক্তি দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা সম্ভব নয়—বরং দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং স্থানীয় জনসমর্থনের ভিত্তিতে একটি সমন্বিত কৌশল।
বিশ্লেষকেরা আরও বলছেন, যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্রুত ও কার্যকরভাবে পদক্ষেপ না নেয়, তবে সাহেল অঞ্চল ক্রমেই আরও সহিংস, অনিরাপদ ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে—যার প্রভাব পড়বে আফ্রিকা ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত।