প্রকাশ: ০৫ই জুন’ ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ২ হাজার কোরবানির পশু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৩৫টি গরু এবং ৪২৯টি ছাগল রয়েছে। এসব পশু সংশ্লিষ্ট ক্যাম্প ইনচার্জদের (সিআইসি) মাধ্যমে শরণার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দোজা। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ক্যাম্পের বাসিন্দা যেন কোরবানির মাংস পায়। আরও কিছু কোরবানির পশু পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেগুলো এলে বাকি ক্যাম্পগুলোতেও বিতরণ করা হবে।”
সারাদেশের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কোরবানির পশু সরবরাহ, মাংস বিতরণ এবং ঈদ উৎসবকে আনন্দঘন ও সুশৃঙ্খলভাবে উদযাপন নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে শিশুদের মুখে ফুটে উঠেছে নির্মল হাসি, ঈদের খুশিতে উচ্ছ্বসিত পুরো ক্যাম্পজুড়ে এক ভিন্ন আবহ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই ঘরবাড়ি পরিষ্কার করেছেন, শিশুরা অপেক্ষা করছে নতুন পোশাক পরার জন্য।
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আছিয়া খাতুন বলেন, “আমার ছেলে-মেয়েরা নতুন জামা পেয়েছে, এইবার ঈদের মতো লাগছে। ঘর পরিষ্কার করেছি, রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কোরবানির মাংস পেলে সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খাব। আমার শিশুরা অনেক খুশি হয়েছে।”
থাইংখালী ক্যাম্পের আয়াত উল্লাহ বলেন, “আমাদের মতো সাধারণ রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির মাংস এক অপার আশীর্বাদ। বছরের অন্যান্য সময়ে গরুর মাংস আমাদের খাবারের তালিকায় খুব কমই থাকে। তাই ঈদের এই দিনগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চারা যখন মুখিয়ে থাকে মাংসের জন্য, তখন তাদের সেই খুশির ঝলক চোখে-মুখে ফুটে ওঠে। এই খুশি, এই তৃপ্তি—এটাই তো ঈদের আসল সৌন্দর্য। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যিনি আমাদের ঘরে এই বরকত পৌঁছে দিয়েছেন।”
জানা গেছে, ক্যাম্পে বসবাসরত কিছু সচ্ছল রোহিঙ্গা নিজ উদ্যোগে কোরবানির পশু কিনেছেন। স্থানীয় প্রশাসন তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
উপজেলা কৃষকদলের সদস্য সচিব সাদমান জামি চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থার সহায়তায় কোরবানির পশু বরাদ্দের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্যোগের মাধ্যমে শরণার্থীদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া, মানবিক সহায়তা জোরদার করা এবং সামাজিক সহাবস্থানের এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
কমিশনার মোহাম্মদ শামসুদ্দোজা বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ২ হাজার কোরবানির পশু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলোর সহায়তায় গরু ও ছাগল সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, যেন প্রতিটি ক্যাম্পের বাসিন্দা কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়া।”
এই উদ্যোগের মাধ্যমে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক সহমর্মিতা ও সামাজিক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।