প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের তোকারা দ্বীপপুঞ্জ আবারও কেঁপে উঠেছে একটি মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে। শনিবার (৫ জুলাই) সকালে রিখটার স্কেলে ৫.৪ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয় দ্বীপপুঞ্জটির বিস্তীর্ণ এলাকায়। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের কোনো খবর না মিললেও স্থানীয় প্রশাসন ও আবহাওয়া বিভাগ জনগণকে সতর্ক অবস্থায় থাকার আহ্বান জানিয়েছে, বিশেষ করে সম্ভাব্য ভূমিধস এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা মাথায় রেখে।
জাপানের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, তোকারা দ্বীপপুঞ্জের প্রায় ১৯ কিলোমিটার গভীরে উৎপত্তি হয় এই ভূমিকম্পটির। ভূকম্পনের তীব্রতা এমন ছিল যে আশপাশের বেশ কয়েকটি দ্বীপেও তা স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। তবে স্বস্তির খবর হলো, ভূমিকম্পটির পর সুনামির কোনো সতর্কতা জারি করা হয়নি। তবুও আগাম সতর্কতা হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন দুর্বল অবকাঠামো এবং পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা করে জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এই ভূমিকম্প কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বরং এটি গত দুই সপ্তাহ ধরে তোকারা দ্বীপপুঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকায় ভূকম্পনের এক দফা ধারাবাহিকতার অংশ। আবহাওয়া বিভাগ ও ভূতাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর দেওয়া তথ্য বলছে, ২১ জুন থেকে শুরু হয়ে আজ পর্যন্ত তোকারায় প্রায় ৯০০টিরও বেশি ছোট-বড় ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি স্বাভাবিক নয় এবং অঞ্চলটি বর্তমানে ভূকম্পনজনিত দিক থেকে ‘অত্যন্ত সক্রিয়’ অবস্থায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে দ্বীপপুঞ্জের হাজার হাজার বাসিন্দার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রায় প্রতিরাতেই ছোট বা মাঝারি ভূমিকম্পে কেঁপে উঠছে এলাকা, ফলে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ খোলা জায়গায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন জরুরি প্রস্তুতি হিসেবে উদ্ধারকারী দল, অ্যাম্বুলেন্স এবং অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছে, যাতে যেকোনো বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলা দ্রুততার সঙ্গে করা যায়।
বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা বলছে, জাপান বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ। তবে এবারের পরপর বহু কম্পন ও আশঙ্কাজনক মাত্রার ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। ভূতত্ত্ববিদরা বলছেন, সমুদ্রতলের পাত সঞ্চালনের কারণে অঞ্চলটি ভূমিকম্প প্রবণ হয়ে উঠেছে, এবং এতে করে একটি বড় ধরনের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো ইতিমধ্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে জরুরি বৈঠকে বসেছে। বিশেষত তোকারা দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। অতীতের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির ওপর ভিত্তি করে জাপান এই সংকট মোকাবেলায় সচেষ্ট রয়েছে, তবে এমন ঘন ঘন ভূমিকম্প সাধারণ নাগরিকদের মাঝে স্বাভাবিক উদ্বেগ এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
তোকারা দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দারা এখন প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছেন উদ্বেগ আর অজানা আশঙ্কায়। মাঝেমধ্যে স্থির প্রকৃতিও যেন হঠাৎ রূঢ় ও কাঁপুনি-ধরা হয়ে উঠছে। ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে, তা এখনও অনিশ্চিত, তবে একথা নিশ্চিত যে জাপান আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি—এবং এর সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাষ্ট্রীয়ভাবে।