প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । নিজস্ব সংবাদদাতা। একটি বাংলাদেশ অনলাইন
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় এক নেতার নেতৃত্বে। ঘটনায় দুইজন গুরুতর আহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, পরিকল্পিত এই হামলা চালানো হয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব ও জমি সংক্রান্ত পুরনো বিরোধকে ঘিরে। পুরো এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং ক্ষোভে ফুঁসছে স্থানীয়রা।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৪ জুলাই) দিবাগত রাতে উপজেলার কাশিনগর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে অবস্থিত ‘মনির ভেরাইটিজ স্টোর’-এ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, রাত গভীর হলে একটি সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হঠাৎ করেই দোকানে আক্রমণ চালায়। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন কাশিনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইয়ুব আলী ভেন্ডার, একরাম হোসেন ও বাপ্পী হোসেনসহ আরও ৮-১০ জন।
দোকানে অবস্থান করছিলেন মালিক মনির হোসেন। হামলার সময় তিনি প্রতিরোধের চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তার চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে হামলাকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মনির হোসেনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতের ভাই মো. আলী বলেন, ‘আমার ভাই দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে আসছিলেন। হঠাৎ করে হামলা চালিয়ে তার দোকানটি ভাঙচুর করা হয় এবং মালামাল লুটে নেওয়া হয়।’
জমি নিয়ে এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। জায়গার মালিক মিলন আক্তারের ছেলে তাজুল ইসলাম জানান, ‘এই জমিটি আমার মায়ের নামে রেকর্ডভুক্ত। রাজনৈতিক চাপে আমরা দীর্ঘদিন জায়গায় যেতে পারিনি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দোকানঘর নির্মাণ করি। শুক্রবার রাতে বিদ্যুৎ ও সিসিটিভি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হামলা চালানো হয়।’
ঘটনার পর চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও গ্রেপ্তার বা দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখনও নেওয়া হয়নি, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ বাড়ছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার এসআই মোর্শেদ আলম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে ঘটনার পর কাশিনগরসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এ ধরনের হামলা শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে বিনষ্ট করে। তাঁরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন যে, রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে থাকা মানেই নিরাপত্তাহীনতা। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের নিরপেক্ষ ও কঠোর ভূমিকা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় একের পর এক হামলার ঘটনা স্থানীয় জনগণের মাঝে নিরাপত্তাহীনতা, অসন্তোষ এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাতে পারে।