সর্বশেষ :
তানজিন তিশা: ‘দুইটা বিয়ে করেছি, তিন নাম্বারের প্রস্তুতি চলছে’—গুজব নিয়ে মুখ খুললেন আলোচিত অভিনেত্রী ট্রাম্পের নতুন শুল্ক যুদ্ধ: ১২ দেশের পণ্যে সোমবার থেকে আসছে বাড়তি শুল্ক দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ড. এনামুল হক অবৈধ সরকারের প্রলোভনে এমপি হয়েছেন সাকিব’: আমিনুল হকের কঠোর মন্তব্য নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ইরান সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পরিদর্শনের অনুমতি দিচ্ছে না’: ট্রাম্প পঞ্চাশেরও অধিক মানুষকে সামনে গুলিতে নিহত হতে দেখেছি” — আলী আহসান জুনায়েদ জুলাই বিপ্লবকে কটাক্ষ করে ফেসবুক পোস্ট—কনস্টেবল রনি সাময়িক বরখাস্ত আমরা দিই, নেই না”—চাঁদা বিতর্কে মুফতি ফয়জুল করিমের সোজাসাপ্টা জবাব গাজায় নিজেদের গুলিতে নিহত ৩১ সেনা: ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দুর্বল সমন্বয় প্রশ্নবিদ্ধ

নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৫ জুলাই, ২০২৫
  • ২ বার
নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | নিজস্ব সংবাদদাতা | একটি বাংলাদেশ অনলাইন

জামালপুরের ফুলবাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃসদন হাসপাতালে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ও জনসাধারণের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রসব ব্যথা নিয়ে ভর্তি হওয়া নরিন জান্নাত (২১) নামে এক গর্ভবতী মায়ের ভুল চিকিৎসার কারণে তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই মারা যায়। এ ঘটনায় হাসপাতালের দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

নরিন জান্নাতের স্বামী মো. সোহেল আনসারী অভিযোগ করেন, ‘আমরা বহুবার ডাক্তার ডাকার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, কিন্তু হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না। নার্সদের মাধ্যমে প্রসব করানোর চেষ্টা করা হয়, যেখানে কোনো ধরনের সিজার করা হয়নি, বরং টানা ও হেঁচড়া করে প্রসব করানো হয়। এর ফলে আমার সন্তান মারা গেছে, আর আমার স্ত্রী প্রচণ্ড রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ তিনি আরও জানান, অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তিন ঘণ্টা পর তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হয়েছে।

হাসপাতালে উপস্থিত টেকনোলজিস্ট রহিমা বেগম বলেন, ‘প্রসবের সময় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না, নার্সরাই দায়িত্ব নিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা করেন। তবে দীর্ঘ চেষ্টা সত্ত্বেও নবজাতকের বাঁচার সম্ভাবনা ছিল না এবং সে মারা যায়।’

এ ঘটনায় শনিবার ভোররাতে আহত পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় জনতা হাসপাতালের সামনের অংশ ঘিরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। তারা হাসপাতালের ভেতরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানায়। উত্তেজিত জনতা পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নার্স শিরিন ও আরেক নার্সকে আটক করে তাদের হেফাজতে নেয়।

জামালপুর সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নগর মাতৃসদন হাসপাতালটি পৌরসভার প্রকল্পভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। আমরা ইতিমধ্যে হাসপাতাল পরিদর্শন করেছি এবং মৃত নবজাতকের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। দুই নার্সকে আটক করা হয়েছে। প্রসূতির চিকিৎসা চলছে। ঘটনার তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হাসপাতালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মফিজ উদ্দিন শেখের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে হাসপাতালের এই অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা ত্রুটির বিষয়টি স্থানীয় মানুষের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ গর্ভবতী নারীদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেছেন, যাতে ভবিষ্যতে এমন নির্মম ঘটনা আর না ঘটে।

এই ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে ছোট ছোট সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে সেবা গ্রহণকারীদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ার বিষয়টি নিয়ে। বিশেষ করে মা ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব হাসপাতালে থাকা ডাক্তারদের, যাদের অনুপস্থিতিতে নার্সদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জামালপুরের স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও স্থানীয় জনগণের মাঝে এখনো মীমাংসার প্রত্যাশা জ্বলজ্বল করছে। তারা চান, দেশের প্রত্যেক হাসপাতালে মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু ব্যবস্থা নেওয়া হোক এবং চিকিৎসা সেবা যেন মানবিক ও পেশাদারিত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ভুল হয়।

এই দুঃখজনক ঘটনা দেশের স্বাস্থ্য সেবায় অগ্রাধিকার ভিত্তিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথাও পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মাতৃদুগ্ধপানের পরিবার যেন এ ধরনের অপমৃত্যুর শিকার না হয়।

এখানে এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যে, হাসপাতালগুলোতে যথাযথ ডাক্তার ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া মাতৃদুগ্ধপান কেন্দ্রিক সকল স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও তদারকি জরুরি, যাতে প্রাণরক্ষায় কোনো গাফিলতি না ঘটে।

জামালপুরের এই ঘটনাটি আমাদের সমাজে স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থার এক দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে গেল, যেখানে অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে একটি শিশুর প্রাণ গেলো এবং পরিবারের জীবন অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। এই দুঃখের বিষয়টির দ্রুত সমাধান ও প্রতিকার প্রত্যাশা করেন দেশবাসী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া