সর্বশেষ :
তানজিন তিশা: ‘দুইটা বিয়ে করেছি, তিন নাম্বারের প্রস্তুতি চলছে’—গুজব নিয়ে মুখ খুললেন আলোচিত অভিনেত্রী ট্রাম্পের নতুন শুল্ক যুদ্ধ: ১২ দেশের পণ্যে সোমবার থেকে আসছে বাড়তি শুল্ক দেশের উন্নয়নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ড. এনামুল হক অবৈধ সরকারের প্রলোভনে এমপি হয়েছেন সাকিব’: আমিনুল হকের কঠোর মন্তব্য নার্সদের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ইরান সাক্ষাতের ইচ্ছা প্রকাশ করলেও পরিদর্শনের অনুমতি দিচ্ছে না’: ট্রাম্প পঞ্চাশেরও অধিক মানুষকে সামনে গুলিতে নিহত হতে দেখেছি” — আলী আহসান জুনায়েদ জুলাই বিপ্লবকে কটাক্ষ করে ফেসবুক পোস্ট—কনস্টেবল রনি সাময়িক বরখাস্ত আমরা দিই, নেই না”—চাঁদা বিতর্কে মুফতি ফয়জুল করিমের সোজাসাপ্টা জবাব গাজায় নিজেদের গুলিতে নিহত ৩১ সেনা: ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দুর্বল সমন্বয় প্রশ্নবিদ্ধ

ট্রেনলাইন হয়ে উঠছে মৃত্যুর করিডোর: যমুনা টিভির অনুসন্ধান, গামছা পার্টির নির্মমতা, আর একজন বেঁচে ফেরা তরুণের জবানবন্দি

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৮ জুন, ২০২৫
  • ৩৫ বার

প্রকাশ: ০৮ই জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ—দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সড়ক। প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রী চলাচল করে এই পথে। কিন্তু সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট এবং এক ভুক্তভোগীর বেঁচে ফেরার অভিজ্ঞতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে—এই রেলপথ শুধু গন্তব্য নয়, বরং হয়ে উঠছে এক নৃশংস মৃত্যুকূপ।

যমুনা টিভির আলোচিত অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান “ক্রাইম সিন” সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রচার করে যেখানে উঠে আসে, গত কয়েক বছরে এই রেলপথের বিভিন্ন স্পটে অন্তত ১৫০ জনের অজ্ঞাত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে আখাউড়া, ভৈরব, কসবা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী হয়ে ঢাকার দিকে আসা পথে।

এসব লাশের বেশিরভাগই অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে পুলিশের নথিভুক্তিতে আত্মহত্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এরপর সাধারণত মর্গে পাঠিয়ে মাটি চাপা দেওয়া হয়—ধর্ম, পরিচয়, বংশ নির্বিশেষে সব এক কাতারে। রেলওয়ের ডোমঘরের সামনে ঝুলে থাকে মৃতদের কাপড়চোপড়, কেউ যদি কখনও এসে চিনতে পারে—এই আশায়। কিন্তু কয়েক মাস বৃষ্টিতে ভেজা আর রোদে পোড়া সেই কাপড় দেখে কে চিনবে?

এসব মৃত্যুর পেছনে আসল চিত্রটি আরও ভয়াবহ। তদন্তে জানা গেছে, একটি সক্রিয় ছিনতাইকারী গোষ্ঠী ‘গামছা পার্টি’ নাম দিয়ে পরিচিত, যারা মূলত রাতের ট্রেনে শিকার খোঁজে। সাধারণত ট্রেনের বগির সংযোগস্থলে যেখানে বাথরুম আর করিডোর থাকে, সেই নির্জন জায়গাগুলোতে একা যাত্রীদের লক্ষ্য করে হামলা করে তারা।

ছিনতাইয়ের ধরন এতটাই নির্মম যে এটি কল্পনারও অতীত। প্রথমে একটি গামছা চিকন করে মোচড়ানো হয়। এরপর পিছন থেকে গলায় ফাঁস দিয়ে দুই দিক থেকে টান দিয়ে মাত্র ১৫ সেকেন্ডে নিঃশ্বাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। যদি মৃত্যু না-ও হয়, যাত্রী এতটাই দুর্বল হয়ে পড়ে যে প্রতিরোধের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এরপর পকেট খালি করে, ফোন, মানিব্যাগ নিয়ে পাশের দরজা খুলে ফেলে দেওয়া হয় চলন্ত ট্রেন থেকে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় লাগে দেড় মিনিটের কম। ট্রেনের গর্জন আর রাতের নিস্তব্ধতা তাদের সহায়ক।

এই বাস্তবতা যেন নিছক পরিসংখ্যান নয়—প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে যেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। এক্টিভিস্ট Md. Mostafa Haroon তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে নিজের জীবন থেকে তুলে ধরেন এমনই এক ঘটনা।

তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি, যখন তিনি তুরাগ ট্রেনে করে এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর ফিরছিলেন। রাতের লোকাল ট্রেন, একটি নির্জন বগি, এবং সেখানে ওত পেতে থাকা ‘গামছা পার্টি’। আচমকা গলায় গামছা জড়িয়ে ফেলে দেয় তাকে চলন্ত ট্রেন থেকে। অজ্ঞান অবস্থায় রেললাইনের পাশে পড়ে থাকেন তিনি, ৫ দিন পর্যন্ত কোনো সন্ধান মেলে না তাঁর। পরিবার, বন্ধু, সহপাঠীরা খুঁজে বেড়ায় ঢামেক, রেলস্টেশন, রেলওয়ে ডোমঘর—সবখানে। তারই এক আত্মীয় একসময় ঢামেক হাসপাতালে একটি অচেনা, ক্ষতবিক্ষত, নগ্নদেহ পড়ে থাকতে দেখে শনাক্ত করেন মাথার একটি বিরল রোগের কারণে চুলহীন একটি দাগ থেকে। তখনও তিনি শয্যাশায়ী, অচেতন, রক্ত ও ধুলায় মলিন।

এই গল্প একটি ব্যতিক্রম নয়—বরং রেলপথে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা শত শত বীভৎস ঘটনার একটি ছিন্নদৃষ্ট প্রতিচ্ছবি। Haroon আরও লেখেন, সেই সময় তার কাছে মাত্র ১৫০ টাকা, একটি মোবাইল, কিছু নোটবই আর একজোড়া লম্বা পেপার হোল্ডার ছিলো—সম্ভবত সেটিই ছিনতাইকারীদের কাছে মূল্যবান মনে হয়েছিল।

তাঁকে যখন উদ্ধার করা হয়, তখন তাঁর শরীর ছিল পোশাকহীন, সুঁচে ছিদ্র, রক্ত, ধুলায় ভর্তি। তাঁর হাত ছিল বেডের সঙ্গে বাঁধা। কারণ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, “যাতে আবার উঠে পালিয়ে না যায়।”

ঘটনার বর্ণনা যেমন নির্মম, তেমনি আমাদের আইন-শৃঙ্খলা ও বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা আরও হতাশাজনক। যেসব ছিনতাইকারী ধরা পড়ে, তারা আদালতে সহজেই জামিনে মুক্তি পায়। পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর সাজা দেওয়া সম্ভব হয় না। ট্রেনের ভেতর কোনো সিসিটিভি নেই, রেলপুলিশের নজরদারি অপ্রতুল, আর যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা অনেক কম।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর এসআই ইমরান এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন, এই চক্র বহুদিন ধরেই সক্রিয়। সাধারণ ছিনতাই থেকে এখন তারা নিয়মিত খুনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে।

আজ যখন বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে, রাতের ট্রেনগুলোর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে, তখন এই ভয়াবহ চিত্র নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে যাতায়াতের আধুনিকতা অর্থহীন।

একটি বাংলাদেশ অনলাইন মনে করে, যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের এখনই উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। রেললাইন যেন মৃত্যুর করিডোর না হয়, গন্তব্য যেন গোরস্থান না হয়—এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত রাষ্ট্রের সকল দায়িত্বশীল পক্ষের। আমাদের সহযাত্রী যেন গামছা না হয়, বরং হয় আত্মবিশ্বাস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া