সর্বশেষ :
নির্বাচনের আগে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করাই প্রধান শর্ত: ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ ইতিহাসে স্থান পাবে, রাজনীতিতে নয়”: জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড. রিপনের ঘোষণা ব্যাংকক বিমানবন্দরে অন্তর্বাসে পাইথন লুকিয়ে প্রাণী পাচারের চেষ্টা, পুরোনো অপরাধী আবারও ধরা আর যেন কোনো স্বৈরাচারী শাসন গড়ে না উঠতে পারে, সেজন্য সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে: নাহিদ জুলাইয়ের বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ‘মব’ নয়, গণতন্ত্র রক্ষায় নিয়োজিত শক্তি: তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা: ক্ষতিগ্রস্ত মধ্যবিত্ত ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের পরপরই ইউক্রেনে রাশিয়ার ভয়াবহ হামলা সিমন্সের সংক্ষিপ্ত অনুপস্থিতি, শ্রীলঙ্কা সফরে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে তাকে ছাড়াই মাঠে নামবে বাংলাদেশ অমিতাভের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত জয়া, আলোচনায় ‘ডিয়ার মা’র ট্রেলার এল ক্লাসিকোর দিনক্ষণ চূড়ান্ত, প্রকাশিত হলো ২০২৫-২৬ লা লিগার সূচি

দুই বছর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঘুরে দাঁড়ানো: ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বাংলাদেশের রিজার্ভ

একটি বাংলাদেশ ডেস্ক
  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫
  • ৫ বার
দুই বছর পর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঘুরে দাঁড়ানো: ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল বাংলাদেশের রিজার্ভ

প্রকাশ: ২৭শে জুন’ ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন

দীর্ঘ দুই বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ আবারও ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। বহুল আলোচিত রিজার্ভ সংকটের পর দেশের অর্থনীতির এই ঘুরে দাঁড়ানোকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর একাধিক কিস্তির ঋণ সহায়তা যুক্ত হওয়ায় রিজার্ভ বেড়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান নিশ্চিত করেন, আইএমএফ থেকে দুই কিস্তিতে এসেছে ১৩৪ কোটি ডলার, এডিবি দিয়েছে ৯০ কোটি ডলার এবং জাইকার সহায়তাও রিজার্ভে যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দিন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলার। তবে আইএমএফ অনুমোদিত ব্যালেন্স অব পেমেন্টস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন ম্যানুয়াল (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব দাঁড়িয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাবের বাইরেও রয়েছে ‘ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ’ নামে একটি অভ্যন্তরীণ পরিমাপক, যা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের কার্যক্রমের বাস্তবিক রূপ প্রতিফলিত করে। যদিও এই হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয় না, তবে ধারণা করা হচ্ছে—বর্তমানে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। এ রিজার্ভ দিয়ে বাংলাদেশ সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আমদানি ব্যয় নির্বিঘ্নে চালাতে সক্ষম, যা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মানদণ্ডে একটি নিরাপদ পর্যায় হিসেবে বিবেচিত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন সরকার গঠনের পর প্রবাসী আয়ের প্রবাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রবাসীরা হুন্ডির পরিবর্তে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং খাতেও ফিরেছে আস্থার বাতাস, যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা ও মূল্য হ্রাস পেয়েছে, ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ অনেকটাই লাঘব হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, গত ১০ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেনি। একই সময়ের মধ্যে বাজেট সহায়তা ও উন্নয়ন ঋণ হিসেবে ৫০০ কোটির বেশি ডলার বিদেশি উৎস থেকে এসেছে। এই অর্থ মূলত ব্যবহার করা হচ্ছে চলতি হিসাবে ঘাটতি কমানো এবং আমদানি ব্যয় সামলাতে। দীর্ঘমেয়াদে এই অর্থনীতিক নীতিমালার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। কিন্তু এরপরই পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক সংকট, আমদানির উচ্চ ব্যয়, ইউক্রেন যুদ্ধের জ্বালানি সংকট, এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক অস্থিরতা ও দুর্নীতির কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে যায়। এসবের ফলে রিজার্ভ দ্রুত পড়ে যায়।

ফলে ২০২২ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবলের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের একটি ঋণ চেয়ে আবেদন করে। আইএমএফ ও অন্যান্য সংস্থার কঠোর শর্ত পূরণে নেওয়া হয় একাধিক আর্থিক সংস্কার, যার মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্বচ্ছতা, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা আনা এবং ভর্তুকির যৌক্তিক ব্যবহার। সেই প্রক্রিয়ার সফল বাস্তবায়নের ফলেই এই পুনরুদ্ধার সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ৩০ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ অর্জন নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক মাইলফলক। তবে এই অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন হবে কঠোর আর্থিক শৃঙ্খলা, প্রবাসী আয় ধরে রাখা, আমদানিতে দক্ষতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। কারণ বৈদেশিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তা এবং দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা এখনো বহাল আছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল বৈদেশিক রিজার্ভ কাঠামো যে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তার প্রমাণ মিলেছে এই সাম্প্রতিক অর্জনে। যদিও পথ এখনো দীর্ঘ, তবে দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে এই রিজার্ভ বাড়ার প্রবণতা বিশেষ আশাব্যঞ্জক বলে অভিমত দিয়েছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

সরকার, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বিত উদ্যোগ যদি চলমান থাকে, তবে আগামি দিনগুলোতে রিজার্ভ আর্থিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশা দেশের জনগণের।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর

স্বত্ব © ২০২৫ একটি বাংলাদেশ | সম্পাদক ও প্রকাশক: মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সিদ্দিক ইবনে আম্বিয়া