প্রকাশ: ০৫ জুলাই, ২০২৫ | একটি বাংলাদেশ ডেস্ক | একটি বাংলাদেশ অনলাইন
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সাক্ষী, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ.টি.এম. শামসুল হুদা আর নেই। শনিবার (৫ জুলাই) সকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে রেখে গেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মরহুমের মেয়ে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তিনি দেশে ফিরলেই জানাজা ও দাফনের সময়সূচি নির্ধারিত হবে। আপাতত মরদেহ ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
এটিএম শামসুল হুদা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রশাসন কাঠামোর একজন অভিজ্ঞ ও পেশাদার সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে অন্তর্ভুক্ত হন এবং প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে নিযুক্ত থেকে দেশের সেবায় নিজেকে নিবেদিত করেন।
২০০০ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের আগে তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বাগেরহাটের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে কাজ করা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতের বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।
২০০৭ সালে তিনি দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান এবং তার নেতৃত্বে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে তিনি দেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হন। তার সময়ে পরিচালিত নির্বাচনকে অনেকেই ‘বিশ্বস্ততা ও নিরপেক্ষতার মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
এই নির্বাচনের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা শেষে দেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক সরকার গঠন সম্ভব হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, এ নির্বাচনের সফলতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে, যেখানে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল।
সদালাপী, বিনয়ী ও দূরদর্শী এই আমলার মৃত্যুতে দেশের প্রশাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থায় এক অভিজ্ঞ ও পরিশীলিত ব্যক্তিত্বের শূন্যতা তৈরি হলো, যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তার সততা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা দেশের বহু প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরা তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকবার্তা প্রদান করেছেন।
একটি বাংলাদেশ অনলাইন পরিবারের পক্ষ থেকেও এই বিশিষ্ট আমলার প্রয়াণে গভীর শোক ও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।