প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ । একটি বাংলাদেশ ডেস্ক । একটি বাংলাদেশ অনলাইন
সমাজে এখনও কিছু কিছু ধারণা ও প্রচলিত মূল্যবোধ বিদ্যমান, যা নারীকে মাতৃত্ব গ্রহণের জন্য আগে বিয়ের শর্তে আবদ্ধ করে রাখে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক নারীই সেই প্রচলিত ধারা ভেঙে নিজেদের পথ তৈরি করছেন। তেমনই এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন ভারতীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী রামান্না। তিনি বিয়ে না করেই একা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং বর্তমানে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
চল্লিশ বছর বয়সে এসে রামান্না যখন মাতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাঁর এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছিল অনেকের মনে। কিন্তু তিনি দ্বিধাহীন কণ্ঠে জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত ছিল তাঁর জীবনের পরিপূর্ণতার এক স্বতন্ত্র অধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে মা হওয়ার স্বপ্ন লালন করলেও বিয়ের প্রতিষ্ঠানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি বলে জানান এই অভিনেত্রী।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রামান্না বলেন, “বিয়ে করার কথা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। তবে মা হতে চেয়েছি বরাবর। এই দুটো বিষয় যে একে অপরের পরিপূরক হতে হবে— এই ধারণা আমি মানি না। তাই যখন শুনলাম একা নারীরাও আইনি ও চিকিৎসাগতভাবে মা হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, তখনই সিদ্ধান্ত নেই— এবারই সময়।”
তিনি আরও বলেন, আইভিএফ বা ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতির মাধ্যমে তিনি গর্ভধারণ করেছেন। তবে এই যাত্রাপথ ছিল মোটেও সহজ নয়। অবিবাহিত মা হতে চান শুনে অনেক চিকিৎসকই প্রথমে তাঁকে ফিরিয়ে দেন। চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। এক পর্যায়ে একটি ক্লিনিকে তাঁকে সাদরে গ্রহণ করা হয় এবং শুরু হয় তাঁর মাতৃত্বযাত্রা।
রামান্না বলেন, “অনেক বাধা অতিক্রম করেই আজ আমি মা হতে পেরেছি। যারা শুরুতে আমাকে নিরাশ করেছিলেন, তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। বরং যাঁরা পাশে থেকেছেন, সাহস জুগিয়েছেন, চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন— তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।”
তিনি আরও বলেন, সমাজে অনেক নারী আছেন, যারা সন্তান চাইছেন, কিন্তু বিয়ের সামাজিক চাপে নিজের সিদ্ধান্তকে প্রকাশ করতে ভয় পান। তাঁদের উদ্দেশে রামান্না বলেন, “নিজের জীবন, নিজের সিদ্ধান্ত। সমাজের ছকে জীবনকে আটকে রাখা উচিত নয়। সন্তান জন্ম দেওয়া বা না দেওয়ার অধিকার নারীর নিজের হওয়া উচিত। এবং সেই সিদ্ধান্ত সম্মানের সঙ্গেই গ্রহণ করা প্রয়োজন।”
রামান্নার এই সিদ্ধান্ত সামাজিকভাবে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে যেখানে পরিবার ও সামাজিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে একা মা হওয়ার সিদ্ধান্ত এখনো অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জিং বিষয়, সেখানে তাঁর এই উদ্যোগ অনেক নারীর জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণার উৎস।
জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মাতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত সামাজিক শেকল ভাঙার এক সাহসী প্রতীক হয়ে উঠেছে। যেখানে একজন নারী তাঁর ইচ্ছার প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু করেছেন, সেখানে সমাজকেও হয়তো নতুন করে ভাবতে হবে— মাতৃত্ব কি কেবলই বৈবাহিক বন্ধনের শর্তসাপেক্ষ? নাকি তা একান্তই একজন নারীর নিজস্ব অধিকার?